সকাল আটটা। চলছে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। কিন্তু বেলা বাড়তেই রূপ নেয় রণক্ষেত্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনবরত গুলিতে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন নতুন এক বাংলাদেশ এর স্বপ্ন দেখা তরুণরা। তবু রেহাই মেলেনি। একে একে ছয় তরুণের প্রাণ কেড়ে নেয় পুলিশের বুলেট। নিভে গিয়েছিল দশম শেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাসের জীবনপ্রদীপও। তাকে গুলি করার দৃশ্য নিজ চোখে দেখেন আরেক সহযোদ্ধা রাব্বি হোসেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে পুলিশের নৃশংসতা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে রাব্বির বর্ণনায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। আনাসসহ ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে দশম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এই প্রত্যক্ষদর্শী।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
রাব্বি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে প্রথমে আমরা চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেই। আমার সঙ্গে আনাস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌরভ, মুজাহিদসহ অনেকে ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টিএসসির দিকে যাওয়ার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আমরা পুলিশের বাধার সম্মুখীন হই। আমাদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। প্রাণ বাঁচাতে আমরা নবাব কাটারা গলির মুখে আশ্রয় নেই। ওই সময় পুলিশের গুলিতে অনেকই আহত হন। আমারও গুলি লাগে।
তিনি বলেন, দুপুর ১২টার দিকে আরও মারমুখি হতে থাকে পুলিশ। আমার পাশের একজনের হাতে গুলি লাগে। আমরা গুলি বের করার চেষ্টা করি। একইসঙ্গে ঘটনার দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করি। ঠিক তখনই নবাব কাটারা গলির মুখে আনাসকে টার্গেট করে গুলি ছোড়েন একজন পুলিশ সদস্য। আমি সরাসরি তাকে গুলি করার দৃশ্য দেখতে পাই। এরপর আমরা আনাসকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমার কপালে ছররা গুলি লাগার কারণে কিছু দূর যাওয়ার পর মাথা ঘুরে পড়ে যাই। তখন আনাসকে নিয়ে হাসপাতালে যান সৌরভ। পরে জানতে পারি আনাস শহীদ হয়েছেন। এরপর তার বাসায় গিয়ে মা-বাবার কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেই। এছাড়া আনাসকে গুলি করার ও হাসপাতালে নেওয়ার দৃশ্য আমি মোবাইলে ধারণ করি। সেই দৃশ্যও তাদের দেখানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী এই সাক্ষী বলেন, সেদিন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, হাবিবুর রহমান, সদীপ কুমার চক্রবর্তীদের নির্দেশে কনস্টেবল সুজন, ইমাজ, নাসিরুলসহ অন্যরা গুলি করেছিলেন। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন মাধ্যমসহ কিছু ভিডিও দেখে তাদের নাম জেনেছি। আমি এসব আসামির ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
ট্রাইব্যুনালে ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসি চেয়ে আজ জবানবন্দি দিয়েছেন শহীদ আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তিও। এছাড়া ১১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন আবদুল গফুর নামের এক ব্যবসায়ী। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, তারেক আবদুল্লাহসহ অন্যরা।
Leave a Reply