পাবনার ঈশ্বরদী ও নাটোরের লালপুর উপজেলার বালুমহাল দখল নিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল ভিডিওতে “ইঞ্জিনিয়ার কাকন বাহিনী” নামের একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে, স্থানীয় মাঝি, জেলে, জনগণ ও থানার রেকর্ড বিশ্লেষণ করে এক ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে।
কে এই ইঞ্জিনিয়ার কাকন?
ইঞ্জিনিয়ার কাকন একজন পেশাদার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ১৯৯৪ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে-বিদেশে কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে বিদেশ থেকে ফিরে বৈধভাবে বালু ব্যবসায় যুক্ত হন। সর্বশেষ তিনি নাটোর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দিয়ে দিয়ার বাহাদুরপুর মৌজার বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন। কাকনের নামে বর্তমানে ঈশ্বরদী থানায় মাত্র দুটি মামলা রয়েছে, যা দায়ের করেছেন বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুর ভাই মেহেদী।
অন্যদিকে জাকারিয়া পিন্টু ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে কী আছে?
জাকারিয়া পিন্টু একজন স্থানীয় বিএনপি নেতা। তার এবং তার দুই ভাই মেহেদী হাসান ও সোনামনির নামে রয়েছে অন্তত ৬২মামলা যার মধ্যে রয়েছে
১৬টি হত্যা মামলা
“অপহরণ”
”ধর্ষণ”
”বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা”
”অস্ত্র ও মাদক মামলা”
”চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ”
থানার নথি ও স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা নদীপথে চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং সাধারণ জেলেদের হুমকি-ধমকি দিয়ে জেলেদের মাছ এবং কৃষকের গরু,মহিষ কেড়ে নেয়। এমনকি ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারি ও অস্ত্রের মহড়া দেয়ার কথাও জানা গেছে।
ইঞ্জিনিয়ার কাকনের বিরুদ্ধে “কাকন বাহিনী” অপপ্রচার কেন?
স্থানীয় সূত্র বলছে, কাকনের বৈধ ইজারাবিষয়ক বাধার মুখে পড়ে জাকারিয়া পিন্টুর বাহিনী। এরপর থেকেই কাকনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কাকন বাহিনী’ নাম দিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ভিডিও ছড়ানো হয়।
প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে
প্রশ্ন উঠেছে, এত মামলার পরও কিভাবে জাকারিয়া পিন্টু ও তার ভাইয়েরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়? কেন তারা বারবার জামিন পায়? স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন,সাঁড়াঘাট, চরাঞ্চল ও ইপিজেড এলাকার মাঝি, জেলে ও কৃষকদের অনেকেই জানিয়েছেন—”ইঞ্জিনিয়ার কাকন থাকায় আমরা কিছুটা নিরাপদ বোধ করি। কিন্তু পিন্টুর ভাইয়েরা নদীতে অস্ত্রসহ মহড়া দেয়, মাছ-নদী দখল করে নেয়, বালু লুট করে কোটি কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।”
বিআইডব্লিউটিএ অনুমোদিত “গ্রুপ অন সার্ভিসেস প্ল্যান লিমিটেড” নামে একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি সাঁড়াঘাটে বৈধভাবে খাজনা আদায় করতে গেলে পিন্টুর বাহিনী তাদের উপর হামলা করে। চাঁদা না দেয়ায় লোকজনকে ধরে নিয়ে পায়ের রগ কেটে দেয়ার অভিযোগও এসেছে।
মাঝি ও জেলেরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং অপপ্রচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
Leave a Reply