গাজায় চলমান মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে দখলদার ও যুদ্ধবাজ ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী।
স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইয়েমেনি সেনাবাহিনী বিশ্বের সব জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা ইসরাইলকে গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং গাজার ওপর অবরোধ প্রত্যাহার করতে চাপ সৃষ্টি করে—যাতে আরও বড় সংঘাত এড়ানো যায়।
হুথি নিয়ন্ত্রিত বাহিনীটি জোর দিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগের প্রেক্ষিতে নৈতিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই তারা এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী দখলদার ফিলিস্তিন, বিশেষ করে গাজা উপত্যকার দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছে, সেখানে দীর্ঘমেয়াদি ইসরাইলি অবরোধ ও সামরিক হামলার কারণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
তারা বলেছে, ‘সমসাময়িক ইতিহাসে গাজায় যে ভয়াবহ গণহত্যা চলছে, তার প্রেক্ষিতে ইয়েমেন একটি গভীর ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ববোধ অনুভব করছে সেই নিপীড়িত জনগণের প্রতি—যারা প্রতিদিন আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে নিরবচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হচ্ছেন’।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, কঠোর অবরোধের ফলে গাজায় অনাহার ও তৃষ্ণা দেখা দিয়েছে—যা কোনো মানবিক অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ, বিশেষ করে আরব ও মুসলিমদের পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব।
এই প্রেক্ষাপটে, ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী ঘোষণা করেছে, তারা সামরিক সহায়তা অভিযান আরও বৃদ্ধি করবে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে নৌ অবরোধের চতুর্থ ধাপ বাস্তবায়ন করবে। এই ধাপে, ইসরাইলি বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো কোম্পানির জাহাজ—সেই কোম্পানির জাতীয়তা যাই হোক না কেন—ইয়েমেনি বাহিনীর আওতাভুক্ত এলাকা বা সক্ষমতার মধ্যে থাকলে, তা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।
তারা সব কোম্পানিকে সতর্ক করেছে যেন এই বিবৃতি জারির সঙ্গে সঙ্গেই ইসরাইলি বন্দরের সঙ্গে সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। অন্যথায়, সেইসব কোম্পানির জাহাজ যে কোনো জায়গায় থাকুক না কেন, তা ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের আওতায় পড়বে।
ইয়েমেনি সেনাবাহিনী বিশ্বের দেশগুলোকে আবারও আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা হস্তক্ষেপ করে এবং এই সংঘাত বিস্তারের আগে তা রোধ করে। একই সঙ্গে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তারা গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করে ও অবরোধ প্রত্যাহার করে।
তারা বলেছে, ‘এই পৃথিবীতে কোনো স্বাধীন বিবেকবান মানুষ এমন অন্যায় মেনে নিতে পারে না’।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইল যদি গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করে এবং অবরোধ তুলে নেয়, তাহলে ইয়েমেনি বাহিনী সব সামরিক অভিযান তৎক্ষণাৎ বন্ধ করবে।
ইয়েমেনি সেনাবাহিনী গাজায় চলমান আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে এবং আরব, ইসলামী ও আন্তর্জাতিক সমাজের ‘লজ্জাজনক নীরবতাকেই’ এর জন্য দায়ী করেছে।
উল্লেখ্য, গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী একাধিকবার ইসরাইলগামী জাহাজে হামলা চালিয়েছে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে দখলকৃত ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে গভীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
সূত্র: মেহের নিউজ
Leave a Reply