জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের প্রত্যক্ষ মদদে ভর্তি পরীক্ষা এবং ওএমআর কেলেঙ্কারিতে জড়িত ৩ শিক্ষক ফের ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব পেয়েছেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ঢাকা পোস্টকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব পাওয়া বিতর্কিত শিক্ষকরা হলেন- প্রফেসর ড. সেলিম আল মামুন, মোল্লা আমিনুল ইসলাম এবং মাসুদ রানা।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত সময়ে বিশ্ববিদালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের প্রত্যক্ষ মদদে ভর্তি পরীক্ষা এবং ওএমআর কেলেঙ্কারিতে এই ৩ শিক্ষক জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। যা বর্তমানে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির কাছে বিচারাধীন রয়েছে, বলে দাবি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের।
এছাড়া মনগড়া আইন করে বিগত সময়ের সুবিধাভোগীদের ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ গত ১৭ বছর যারা সুবিধা বঞ্চিত ছিল, সেই সব বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের রহস্যজনক কারণে পরীক্ষার দায়িত্বে রাখা হয়নি।
দ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই ৩ শিক্ষককে ভর্তি কমিটিতে রাখা হয়নি, তবে তাদের ভর্তি পরীক্ষার ডিউটিতে রাখা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ থাকার পরও কেন তাদের পরীক্ষার দায়িত্বে রাখা হয়েছে, তা ডিন কাউন্সিল বলতে পারবে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা বিগত সময়ে ভর্তি কেলেঙ্কারিতে সরাসরি জড়িত ছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান আছে। তাদেরকে আবারও ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়ায় অসৎ উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত বহন করে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. বখতিয়ার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভর্তি কেলেঙ্কারির ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে জানি। কিন্তু ওই তদন্তে তারা দোষী হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ আমার জানা নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবগতিতেই ওই শিক্ষকদের ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ভিসি হিসেবে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর যোগদান করেন প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। এরপর থেকে তিনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে লাগামহীন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাপক লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেন বিশ্ববিদ্যালয়টি। এতে সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের আর্শিবাদপুষ্ট ছিল ভর্তি পরীক্ষা এবং ওএমআর কেলেঙ্কারিতে জড়িত এই ৩ শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিগত ৫ আগস্টের পর ভিসি সৌমিত্র শেখর পালিয়ে যাওয়ায় তার বাসভবন থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ছিল ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর দুই খাম শিট, চাকরি প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত, ভর্তি পরীক্ষার ফাইল, নিয়োগ খাতা, প্রভাষক নিয়োগ খাতা, তদন্ত প্রতিবেদন, ড্রাইভার নিয়োগ, জিএসটি প্রবেশপত্র, কর্মকর্তা নিয়োগপত্র, অফিস সহায়ক নিয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের নিয়োগ খাতা, বাস হেলপার নিয়োগ খাতা, প্রকল্প বিল ভাউচার, ট্রেজারার নিয়োগ ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।