উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডার ভয়াবহ দাবানলের ধোঁয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় বায়ু দূষণজনিত স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
এর পাশাপাশি নিউ ইংল্যান্ডের কিছু অংশেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড, মেট্রো শহরাঞ্চল, লোয়ার হাডসন ভ্যালি, আপার হাডসন ভ্যালি এবং অ্যাডিরন্ড্যাকস এলাকায় এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব অঞ্চলের বাতাস ‘সংবেদনশীল মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হয়ে উঠেছে।
এদিকে দাবানলের কারণে কানাডায় ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। সেখানকার ধোঁয়া যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন এলাকায় বায়ু দূষণ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
শনিবার নিউইয়র্কের বেশিরভাগ এলাকায় বায়ুমানের সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই) ১০০ ছাড়িয়ে ১৩৫ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি নিউ ইংল্যান্ডের কিছু অংশেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
একিউআই অনুযায়ী, সূচক যত বেশি, বাতাস তত বেশি দূষিত এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য তত বেশি ক্ষতিকর। এই বছরই এর আগে জুলাই মাসে শিকাগোতেও একই ধরনের সতর্কতা জারি হয়েছিল এবং সেখানে শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাড়তি সাবধানতার পরামর্শ দেওয়া হয়।
দাবানল ও এর ধোঁয়ার প্রভাব কেবল স্বাস্থ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বিষয়টি ইতোমধ্যে রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্ব পাচ্ছে। জুলাইয়ের শুরুতে মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্য কানাডার রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি লিখে অভিযোগ করেন, দাবানলের ধোঁয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপভোগে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
বর্তমানে কানাডায় ৫৫০টিরও বেশি দাবানল সক্রিয় রয়েছে, যার বেশিরভাগই ম্যানিটোবা প্রদেশে। দেশজুড়ে গত এক বছরে প্রায় ৬১ লাখ হেক্টর (১৫ মিলিয়ন একর) জমি দাবানলে পুড়ে গেছে।
চলতি বছরের মে ও জুন মাসে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে দাবানলের তাণ্ডব সবচেয়ে বেশি ছিল। শুধু সাস্কাচেওয়ান ও ম্যানিটোবা প্রদেশ থেকেই ৩০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এসব এলাকায় জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই দাবানলের ঘটনা বাড়ছে। তাদের মতে, কানাডা বৈশ্বিক গড় হারের দ্বিগুণ হারে উষ্ণ হয়ে উঠছে এবং দেশটির আর্কটিক অঞ্চলগুলো তিন গুণ হারে গরম হচ্ছে।
Leave a Reply