ইংল্যান্ডের জন্য ওল্ড ট্রাফোর্ডে চলমান চতুর্থ টেস্ট সিরিজ নিশ্চিতের লড়াই। অন্যদিকে, ভারত সিরিজে টিকে থাকার লক্ষ্যে খেলছে। যদিও চতুর্থ দিন শেষে এই লড়াইয়ে এগিয়ে বেন স্টোকসের দল। ইংলিশ অধিনায়ক নিজেই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একই ইনিংসে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট শিকার করে তিনি নাম লেখালেন কিংবদন্তিদের কাতারে। বিপরীতে ভারতীয় বোলাররা কাটিয়েছেন নিদারুণ দিন। ক্যারিয়ারে প্রথম এমন অম্লমধুর দিন কেটেছে জাসপ্রিত বুমরাহ’র।
প্রথম ইনিংসে ভারত ৩৫৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের ইনিংস থামে ৬৬৯ রানে। ফলে প্রথম ইনিংসে তারা ৩১১ রানের লিড নেয়। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে ২ উইকেট হারালেও শুভমান গিলের দল ১৭২ রান তুলে দিনের বাকিটা সময় নিরাপদে শেষ করেছে। যদিও এখনও ভারত ১৩৭ রানে পিছিয়ে। লোকেশ রাহুল ৮৭ এবং গিল অপরাজিত আছেন ৭৮ রানে। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের চতুর্থ দিনে বেশকিছু রেকর্ড হয়েছে। সেসবই একনজরে উল্লেখ থাকছে এই প্রতিবেদনে–
৬৬৯
ভারতের বিপক্ষে টেস্টের এক ইনিংসে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৬৯ রান তুলেছে ইংল্যান্ড। এর আগে ২০১১ সালে তারা সর্বোচ্চ ৭১০ রান করেছিল (অ্যালিস্টার কুক ২৯৪ রান করেন)। তবে ওল্ড ট্রাফোর্ড পেল টেস্টের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস। এর আগে এই ভেন্যুতে অস্ট্রেলিয়া সর্বোচ্চ ৬৫৬ রান করেছিল (১৯৬৪ সালে)।
১০০
৯১ ইনিংসের টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম কোনো ইনিংসে ১০০ রান খরচ করেছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। যদিও ৩৩ ওভারে ১১২ রানের বিনিময়ে তিনি ২ উইকেট নেন। এর আগে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৯৯ রান দিয়েছেন ভারতীয় এই তারকা। গত বছরের ডিসেম্বরে ২৮.৪ ওভার করে তিনি অবশ্য ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। এ ছাড়া এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার টেস্ট ইনিংসে ৩০ ওভার করলেন বুমরাহ, ২০২১ সালে ইংলিশদের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে (এক ইনিংসে) করেছিলেন ৩৬ ওভার।
ম্যানচেস্টার টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারতের চার বোলারই ১০০-এর বেশি রান দিয়েছেন। টেস্টে ভারতের জন্য এটি ২৫তম ঘটনা, তবে গত এক দশকে প্রথম। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্রিসবেন, মেলবোর্ন ও সিডনিতে টানা তিন টেস্টে একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল ভারতীয় বোলারদের।
৫১
বিব্রতকর দিনে বুমরাহ’র জন্য অবশ্য মধুর মুহূর্তও এসেছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতীয় বোলার হিসেবে সর্বোচ্চ ৫১ উইকেট (এখন পর্যন্ত) শিকার করলেন তিনি। সমান ৫১ উইকেট নেন ইশান্ত শর্মাও। তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে বুমরাহ’র সামনে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়াতেও টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট (৬৪) তার। যা একইসঙ্গে কোনো ভারতীয় বোলারের দেশের বাইরে নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের মাঠে সর্বোচ্চ।
৭০০০/২০০
টেস্ট ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ন্যূনতম ৭০০০ রান ও ২০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়লেন বেন স্টোকস। এই তালিকায় প্রথম দুজনই কিংবদন্তি– ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার গ্যারি সোবার্স (৮০৩২ রান ও ২৩৫ উইকেট) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস (১৩২৮৯ রান ও ২৯২ উইকেট)। এই মুহূর্তে টেস্টে স্টোকসের রান ৭০২৩ রান এবং উইকেট ২২৯টি।
১০০/৫
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফাইফার পেয়েছিলেন স্টোকস, পরে ব্যাট হাতে করেছেন ১৪১ রান। একই টেস্টে ফাইফার ও সেঞ্চুরির কীর্তি তার জন্য দ্বিতীয়বার। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ বার এমন নজির গড়েন কিংবদন্তি ইয়ান বোথাম, টনি গ্রেগ একবার ও গাস অ্যাটকিনসন একবার।
একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট শিকার করা মাত্র পঞ্চম অধিনায়ক হলেন স্টোকস। তবে ১৯৮৩ সালে পাকিস্তানের দলনেতা ইমরান খানের (প্রতিপক্ষ ভারত) পর প্রথম এই কীর্তি দেখা গেল। এ ছাড়া অধিনায়ক হিসেবে একই রেকর্ড রয়েছে ডেনিস অ্যাটকিনসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া), গ্যারি সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড), মুশতাক আহমেদ (পাকিস্তান, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
৫০০+
চলমান ইংল্যান্ড সফরে শুভমান গিল (৬৯৭) ও লোকেশ রাহুল (৫০৮) দুজনেই ৫০০ রানের বেশি করেছেন ইতোমধ্যে। অ্যাওয়ে সিরিজে দুজন ভারতীয় ব্যাটারের পাঁচশ রান করার দ্বিতীয় নজির। এর আগে ১৯৭০-৭১ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সুনীল গাভাস্কার (৭৭৪) ও দিলিপ সারদেসাই (৬৪২) একই কীর্তি গড়েন।
বিদেশের মাটিতে কোনো টেস্ট সিরিজে রাহুল মাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় ওপেনার হিসেবে ৫০০+ রান করেছেন। এর আগে গাভাস্কার দুইবার (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৭৪ এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৪২) একই রেকর্ড গড়েন।
এ ছাড়া রাহুল মাত্র দ্বিতীয় এশিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে ৫০০+ রান করলেন ইংল্যান্ডে। অপরজন গাভাস্কার। এ ছাড়া একুশ শতকে বিদেশি ওপেনার হিসেবেও একই কীর্তিতে রাহুল দ্বিতীয়। ২০০৩ সালে ইংলিশ ভূমিতে সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ ৭১৪ রান করেন।
Leave a Reply