ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের তিনটি এলাকায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামরিক অভিযান স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। মানবিক সহায়তার কাজ আরও সহজ করতেই এই বিরতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
এখন থেকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তা প্রতিদিন চালু থাকবে। রোববার (২৭ জুলাই) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
রয়টার্স বলছে, চলমান যুদ্ধের মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবশেষে গাজার কিছু অংশে সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে নতুন ত্রাণ করিডোর চালুর কথাও জানিয়েছে তারা।
রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গাজার আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা সিটি এলাকায় তারা সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবে। এই এলাকায় মার্চ মাস থেকে নতুন করে স্থল অভিযান শুরু হয়নি।
সেনাবাহিনী আরও জানায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার ও ওষুধবাহী গাড়িবহরের জন্য নির্ধারিত নিরাপদ পথও চালু থাকবে।
এদিকে মিসরের রাষ্ট্রায়ত্ত আল-কাহেরা নিউজ টিভি জানায়, রোববার থেকে মিসর সীমান্ত দিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে ত্রাণ পরিবহন শুরু হয়েছে। এর আগে, ইসরায়েল বিমান থেকে ত্রাণ ফেলাও শুরু করে বলে জানায়, যা তারা গাজার মানবিক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ করতে নেওয়া উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ জানায়, গাজায় মানবিক বিরতি ঘোষণার ফলে ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হবে। তবে তারা অভিযোগ করে, ইসরায়েল তাদের গাড়িবহরের জন্য যথেষ্ট বিকল্প রুট দিচ্ছে না, যা ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত করছে।
রয়টার্স বলছে, গাজায় মানবিক সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। এ অবস্থায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র গত শুক্রবার জানায়, তারা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে সরে এসেছে, কারণ তাদের মতে, হামাস কোনও সমঝোতা চায় না।
এর আগে গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় সব রকমের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে ২২ লাখ মানুষের এই ভূখণ্ডে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। মে মাসে সীমিতভাবে ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হলেও কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহে অপুষ্টিজনিত কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।
তবে ইসরায়েল দাবি করছে, গাজায় কোনও দুর্ভিক্ষ নেই এবং তারা হামাসকে চাপে রাখতেই কিছুদিন ত্রাণ বন্ধ রেখেছিল, যাতে বন্দিদের মুক্তি দেয় হামাস।
এদিকে ত্রাণ প্রবেশে সম্মতি দেওয়ার পর ইসরায়েল জানায়, গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে বরং জাতিসংঘ তা যথাযথভাবে বিতরণে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের বিধিনিষেধের মধ্যেও তারা যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলত আগ্রাসনে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এই হামলায় গাজা পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় পুরো জনসংখ্যাই বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।