গোয়ালন্দে ইমাম মাহাদী দাবিদার নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, লুটপাট ও লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার পেছনে কারা উসকানি দিয়েছে এনিয়ে তদন্ত চলছে। সেদিন কারা মুখোশ পরে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে, লাশ পুড়িয়ে উল্লাসের পেছনে কারা উসকানি দিয়েছে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রাথমিক তদন্তে উসকানি ও হামলার পেছনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এঘটনায় ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। যদিও রোববার পর্যন্ত নুরাল পাগলা কিংবা তার নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে পুলিশের মামলায় শনিবার রাতে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের দিরাজতুল্লা মৃধা পাড়ার বাসিন্দা ও উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মাসুদ মৃধা, বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হিরু মৃধা, গোয়ালন্দ পৌরসভার দেওয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাফিন সরদার, এনামুল হক জনি, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়া গ্রামের কাজী অপু এবং উজানচর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃধাডাঙ্গার হায়াত আলী। রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তাদের গ্রেফতারের পর আদালতে পাঠানো হয়েছে। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম জানান, সেদিনের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অন্য দলের নেতাকর্মীরাও জড়িত ছিল। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। গোয়ালন্দ উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. জালাল উদ্দীন বলেন, আমরা গোয়ালন্দবাসী খুবই শান্তিপ্রিয় এবং ধার্মিক। শুক্রবার বাদ জুমা আমাদের সমাবেশ কর্মসূচি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ঘোষণা করি। আমাদের কোনো বিক্ষোভ মিছিল বা নুরাল পাগলার বাড়ি ঘেরাও বা হামলা এ জাতীয় সহিংস কর্মসূচি ছিল না। কিন্তু একটি পক্ষ পূর্বপরিকল্পিতভাবে শান্তি সমাবেশে ঢুকে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। এটা দেখতে পেয়ে আমরা দ্রুত কর্মসূচি শেষ করে হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করি। পরবর্তিতে হামলাকারীরা যে জঘন্যতম ঘটনা ঘটিয়েছে তা শুধু ন্যক্কারজনকই নয় তারা আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলামকেই কলুষিত করেছে। আমি লাশ পোড়ানোসহ সব অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। জেলা জামায়াতের আমির মো. নুরুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেন, নুরাল পাগলা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ইসলামবিরোধী অনেক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। নুরাল পাগলা জীবদ্দশায় নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করত। আমরা বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছি। কিন্তু মাঝখানে ঢুকে একটি পক্ষ তার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়েছে। আমরা তাদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি করছি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার গোয়ালন্দে ইমাম মাহাদী দাবিদার নুরাল পাগলার দরবারে হামলা ও কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় রাসেল মোল্লা নামে একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়।
Leave a Reply