চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের কক্ষে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। সেখানে এক শিক্ষার্থী বলেছেন,‘আপনাকে আমরা বসিয়েছি, আপনি নিজের যোগ্যতায় এখানে আসেননি।’
গতকাল শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেলে এই বাগবিতণ্ডার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ওই শিক্ষার্থীরা।
জানা জায়, গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি বোর্ড বসার কথা ছিল। এই বোর্ডে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী। এদিন সকালেই একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘হত্যাচেষ্টা মামলার আসামির পদোন্নতিতে চবিতে বোর্ড বসছে আজ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সংবাদের জেরে ধরেই মূলত শিক্ষার্থীরা পদন্নোতি বোর্ড বাতিলের দাবিতে দুপুর আড়াইটা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুশল বরণ চক্রবর্তী গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে হেফাজত ইসলামের কর্মী এনামুল হক চৌধুরীর হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ২০তম আসামী। এ ছাড়া সে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসর। গত ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ আয়োজন করে দেশদ্রোহী কাজ করেছেন। বাংলাদেশে কোথাও সংখ্যালঘু গণহত্যা হয়নি। অথচ তিনি আন্তর্জাতিক ভুয়া সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, কুশল বরণ চক্রবর্তীর সাথে ভারতীয় উগ্রবাদী হিন্দু নেতাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভারতে যেয়ে তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং সেই ছবি ফেসবুকে আপলোডও করেন। আমরা এই ফ্যাসিবাদীর সহযোগী ও দেশদ্রোহী ব্যক্তির পদোন্নতি বোর্ড বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওতে দেখা যায় ছাত্রশিবির নেতা সাখাওয়াত হোসেন উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এখানে আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেন নাই।’ এরপরই সাবেক ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা তাহসান হাবিব উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাকে আমরা বসাইছি, আপনি নিজের যোগ্যতায় এখানে আসেননি।’
তখন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার তাহসানকে জিজ্ঞেস করে বলেন, ‘কী করেছি আমি।’ প্রতুত্তরে তাহসান বলেন, ‘আপনারা কেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রমোশন দিচ্ছেন আমাদের রক্ত, আমাদের বিপ্লবের সাথে বেইমানি করে?’ এরপর উপাচার্য চুপ থাকেন আর শিক্ষার্থীরা বলতে থাকেন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ ধরেননি।
ছাত্রশিবিরের নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি সাড়া দেননি।
সাবেক ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা তাহসান হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঠিক এভাবে বলিনি। আসলে ভিসি স্যারের যে যোগ্যতা রয়েছে, তিনি অনেক আগেই ভিসি হতেন বা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, কিন্তু ফ্যাসিবাদী আমলে সেটা সম্ভব হয়নি। জুলাইয়ের পরবর্তী সময়ে যোগ্য ব্যক্তিদের যোগ্যস্থানে বসানো সম্ভব হয়েছে এবং এটার জন্য আমাদের সংগ্রাম, রক্ত, ঘাম-শ্রম দিতে হয়েছে, আন্দোলন করতে হয়েছে। গতানুগতিক ধারা বা নিয়মতান্ত্রিকের বাইরে গিয়ে ছাত্র-জনতা তাদের বসিয়েছেন। মূলত এটাই বুঝানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পদোন্নতি বোর্ড বাতিলের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয় আন্দোলনকারীরা। ফলে উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুশল বরণের বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংবাদপত্রে তার বিষয়ে কিছু সংবেদনশীল নিউজ হয়েছে। এজন্য বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে।