1. info@www.tarangotv.com : তরঙ্গ টিভি :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন

জমি, অর্থ ও মানবতার মিশ্রণে নির্মিত হয়েছে শিক্ষার কারিগর

শোয়েব হোসেন:ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব অনুভব করে সরকার ১৯৮০‑এর দশকের গোড়ার দিকে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। স্বাধীনতার পরপরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তীব্র হয়ে ওঠে। সেই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মাদ্রাসা পরিচালক এবং সমাজসেবকরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই কমিটির সুপারিশক্রমে ১৯৮২ সালে বিএমটিটিআই প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য ছিল মাদ্রাসা শিক্ষকদের আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। এর জন্য প্রথমে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, যাতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, গবেষণা কার্যক্রম এবং ডিজিটাল শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার আশেপাশে যোগাযোগের সুবিধা বিবেচনা করে গাজীপুর জেলার গাছা এলাকাকে নির্বাচন করা হয়। এই স্থানটি শুধু ভৌগোলিকভাবেই কেন্দ্রীয় নয়, বরং শিক্ষা ও প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলির কাছাকাছি হওয়ায় শিক্ষকদের যাতায়াত সহজ হয়।

জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকার প্রায় ১২ একরের একটি বিশাল অংশ বিনামূল্যে প্রদান করে। এই জমিতে প্রশিক্ষণ ভবন, আবাসিক হল, গ্রন্থাগার এবং খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়। অর্থায়নের বিষয়ে বলতে গেলে, প্রাথমিক নির্মাণ কাজের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ করা হয়। এছাড়াও ইউনিসেফ ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির অনুদান ও ঋণ সুবিধা গ্রহণ করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ এবং সমাজসেবকদের আর্থিক ও উপকরণ সহায়তা এই প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মানবিক সহযোগিতার দিক থেকে, দেশের বিশিষ্ট মাদ্রাসা শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ এবং পাঠ্যক্রম বিশেষজ্ঞরা পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য শিক্ষা, শিশু মনোবিজ্ঞান এবং পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করা হয়, যা শিক্ষকদের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন গ্রামীণ মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য বৃত্তি, আবাসন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।

বর্তমানে বিএমটিটিআই প্রতি বছর প্রায় পাঁচশত শিক্ষককে সার্টিফিকেট কোর্স ও ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। ডিজিটাল শিক্ষার যুগে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দূরবর্তী প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে, যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকরাও অংশগ্রহণ করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানটি মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ ও শিক্ষণ সামগ্রী প্রকাশের জন্য একটি জার্নালও চালু করেছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও দুটি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, শিক্ষক বিনিময় কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এইভাবে, সরকারি উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং স্থানীয় সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিএমটিটিআই মাদ্রাসা শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। এর অব্যাহত কার্যক্রম জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়

আরো সংবাদ পড়ুন

© ২০২০-২০২৫ তরঙ্গ টিভি,  সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।

   
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট