শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত এক ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তা হলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান। তবে তিনি অভিযোগগুলোকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভুক্তভোগী শিক্ষক লিয়াকত হোসেন, জাজিরা মোহর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) ও জয়নগর ইউনিয়নের উত্তর কেবলনগর কাজী কান্দি এলাকার বাসিন্দা। তিনি জানান, তার পৈত্রিক সম্পত্তি প্রায় ১৭ বছর ধরে চাচাতো ভাই রাজ্জাক বেপারী ও তার সহযোগীদের দখলে রয়েছে। দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ের পরও সমাধান না পেয়ে তিনি শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কাছে জমি উদ্ধারের আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্তের জন্য জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেন, যিনি পরবর্তীতে দায়িত্ব দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসানকে।
লিয়াকত হোসেন অভিযোগ করেন, “মেহেদী হাসান আমাকে বলেন, জমির সমস্যা সমাধানের জন্য এক লাখ টাকা দিতে হবে। প্রথমে রাজি না হলেও তার চাপে আমি ৮০ হাজার টাকা দিই।” তিনি আরও জানান, ভূমি কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি নিজ খরচে এক্সকাভেটর মেশিন ভাড়া করে সরকারি খাল উদ্ধার করেন। মেহেদী হাসান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন খরচ ফেরত দেবেন এবং জমি বুঝিয়ে দেবেন, কিন্তু খাল উদ্ধারের পর তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন এবং জমি মাপজোকের প্রতিবেদন গোপন রাখেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লিয়াকত হোসেন বলেন, “আমার জমিজমা নিয়ে ঝামেলা আছে। সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলে আমি বলেছি যে টাকা লেনদেনের কোনো ভিডিও বা ভয়েস রেকর্ড নেই, তবে সাক্ষী আছে।”
অন্যদিকে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এসব সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। আমার কাছে কাজের দায়িত্ব আসছিল, আমি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করেছি। কোনো টাকা আমি নেইনি। যারা সাক্ষী হিসেবে নাম দিয়েছে, তাদের কাউকেই আমি চিনি না বা কখনো দেখি নাই।” তিনি আরও বলেন, “যে সাংবাদিক রিপোর্ট করেছে, সে আগে আমার কাছে সুপারিশ নিয়ে এসেছিল এবং টাকা চেয়েছিল। আমি না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ভুয়া রিপোর্ট করেছে।”
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জাজিরায় সরকারি দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এই ঘটনার দিকে নিবদ্ধ হয়েছে।