সব সংস্কার প্রস্তাবের আইনি ভিত্তি দিয়ে এই সরকারের অধীনে যদি আগামী নির্বাচন না হয় তাহলে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে এক মহাদুর্যোগ অপেক্ষা করছে বলে হুঁশিয়ার করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসকে আহ্বান জানিয়ে জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, যদি আপনাদের আরো কোনো পাল্টা যুক্তি থাকে, সর্বদলীয়ভাবে দেশের সেরা বরেণ্য আইনঙ্গদের নিয়ে একটি রাউন্ড টেবিল বৈঠকের আয়োজন করুন। সেখানে যুক্তি পেশ হোক, সেটা সারা দুনিয়াতে লাইভ টেলিকাস্ট হোক দেশ ও বিদেশ দেখুক। জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি না দিয়ে যদি বিদ্যমান কাঠামোতেই আগামী নির্বাচন হয়, তাহলে আরেকটা হাসিনার জন্ম হবে, আরেকটা ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে।
জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রোববার(১৭ আগস্ট) রাজধানী ঢাকার রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র’ এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর আইনগত স্বীকৃতি প্রদান ও আমাদের করণীয় শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন পরবর্তী আলোচনায় একথা বলেন তিনি।
গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে জুলাই ঘোষণা পাঠ করেছেন, সেটা আগামী নির্বাচনের পর, দুই বছর পর সংবিধানে নাকি তফসিলভুক্ত করা হবে। আমি মনে করি, আজকের এই সেমিনার ড. ইউনুস এর জুলাই ঘোষণায় ওই কথার তীব্র প্রতিবাদ। জনগণ তার কথা মানে নাই।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এর আগে বিশিষ্ট আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে দিয়ে বলেছিলেন, যদি আপনারা জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে না পারেন, অক্ষম হন, তাহলে আমাদেরকে দায়িত্ব দেন এই আইনের ভিত্তি ড্রাফট আমরা সরবরাহ করবো।
সেই কথাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, একটি দলের বড় বড় নেতারা এখনো বলছেন, পার্লামেন্ট ছাড়া কি করে আইন তৈরি করা হবে? আজব ব্যাপার। আজকের সেমিনারের তথ্য প্রমাণও তাদের সেসব জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দেওয়া তাদের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ। আপনারা মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, আইন, বিধান সংবিধান প্লকেশন, অর্ডিনেন্স, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছেন।
একটি বড় দলের স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্যের দেওয়া বক্তব্য টেনে গোলাম পরওয়ার বলেন, ওই নেতা বলছেন, সংস্কার কমিশনে যত আইন আপনারা করেন না কেন, আমরা সংসদে গিয়ে মুছে দেব। তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আপনারা শুধু এটা মনে করবেন না যে দেশের আইনকানুন সংবিধান সবকিছু শুধু আপনাদের আলমারিতেই আছে। আইন সংবিধান সম্পর্কে আমাদের কাছেও অভিজ্ঞ মানুষ আছে, রেকর্ড আমাদের কাছে আছে।
ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকে বলেছিলেন, কারা পক্ষে আছে কারা কারা না তা জাতি জানবে, আপনি ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে দেবেন। এ জন্য সর্বদলীয় গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন। মানুষ জানুক। কারা জনআকাঙ্খার পক্ষে আর কারা বিপক্ষে।
তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অধিকাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, পিআর পদ্ধতি ছাড়া কখনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। কিন্তু আপনাদের কি হয়েছে আমরা জানি না। গ্রামে বলে বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখান। সেই বড় দলের নেতারা বলছেন, যে মানুষরা ইভিএম বোঝে না তারা পিআরও বোঝে না। ইভিএম কি আর পিআর কি? ইভিএম হচ্ছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের নাম আর পিআর হচ্ছে ইলেক্টোরাল সিস্টেমের নাম।
গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর হলে কালো টাকা, মনোনয়ন বাণিজ্য, পেশিশক্তি এগুলো যারা করতে পারবে না তারাই পিআর পদ্ধতিকে বাধা দিচ্ছে। পিআর পদ্ধতিতে একটা কোয়ালিটি রিচ পার্লামেন্ট হবে প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়ন হবে। পিআর পদ্ধতি এখন অধিকাংশ জনগণ মত দিয়েছেন। অনেকগুলো জরিপ বলছে, ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ বলেছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। লোয়ার ও আপার হাউজে তারা পিআর চাচ্ছেন।
তিনি দেশের সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ও ইসলামিক শক্তিকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটি মানবিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন জামায়াত আমির। কম্প্রোমাইজ ও সেক্রিফাইসের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পিআর পদ্ধতিকে নির্বাচনের আয়োজন করি।
জাতীয় ঐক্যমতের জন্য জামায়াত অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের অনেক প্রস্তাবনা ছিল। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের দলের নায়েবে আমির ড. তাহের। সব দলের ঐক্যের স্বার্থে আমরা অনেক সেক্রিফাইস করেছি। অনেক ছাড় দিয়ে হলেও আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকার চেষ্টা করছি। তাহলে জুলাই বিপ্লবের জন আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রুপ দিতে হলে বড় বড় দলেরও তো দায়িত্ব আছে, তাদের তো সেক্রিফাইস কম্প্রোমাইজ করতে হবে৷
Leave a Reply