গত বৃহস্পতিবার থেকে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে চলছে টানা বর্ষণ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের আশঙ্কা। পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণ শনিবার (৩১ মে) পর্যন্ত অব্যাহত আছে। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শনসহ এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছেন। এই সময় এ সব এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে বসবাসরতদের মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে আহ্বান জানানো হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এদিকে পাহড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাঙামাটি শহরের ৯টি ওয়ার্ডে মোট ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের মধ্যে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ দেখা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে শুধু ভেদভেদি লোকনাথ মন্দির আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪টি পরিবারের ৬২ জন মানুষ অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এছাড়া বাকি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত থাকলেও সেখানে যেতে অনীহা দেখা গেছে বসবাসকারীদের মধ্যে।
শহরের রুপনগর এলাকার বাসিন্দা খান জাহান আলী বলেন, আমাদের এলাকায় এখনো কোথাও মাটি ধসে পড়েনি, তাই এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাইনি। অনিরাপদ বোধ করলে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাব।
শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, আমরা যদি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাই তাহলে আমাদের ঘরবাড়ি পাহারা দেওয়ার কেউ নেই। নিজেদের বাড়িঘরের কথা চিন্তা করে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাইনি। বেশি সমস্যা দেখলে তখন চলে যাব।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন টিম স্বপ্নবুননের চেয়ারম্যান এন কে এম মুন্না তালুকদার বলেন, পাহাড়ধসের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ করছে। প্রতিটি এলাকায় আমরা মাইকিং করেছি। পাশাপাশি প্রতিটি ঘরে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাতে কারো কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আসমা বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌর এলাকায় ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে লোকনাথ মন্দির আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪টি পরিবার রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের জন্য ২ বেলা খাবারের পাশাপামি শুকনো খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ জানান, যেহেতু গত ২ দিন যাবৎ টানা বর্ষণ হচ্ছে তাই অনেক জায়গায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। এসব এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা ও মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র ও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাতে সবাই একটি মানসম্মত সেবা পায় আমরা সে ব্যপারটি নিশ্চিত করছি।
রাঙামাটি আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাঙামাটিতে ১৪০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
Leave a Reply