
বর্ষার পানি কমতে না কমতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীতে চর উঠার কারণে নৌযান চলাচলের সংকট দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড়ে আসা সারবোঝাই এমভি আম্বু হালিমা-৪ জাহাজটি টানা আট দিন ধরে নদীর বালুচরে আটকে আছে। মানিকগঞ্জ হরিরামপুর উপজেলা, আন্ধারমানিক ঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নদীর মাঝ বরাবর ধু-ধু বালুচর জেগে উঠেছে। ওই চরটির পাশেই স্থির হয়ে আছে জাহাজটি। নদীর দুই পাড় থেকে চর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে প্রায় ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডুবোচর, যা বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হারুকান্দি থেকে গোপীনাথপুর পর্যন্ত নদীর মাঝ বরাবর সৃষ্ট এ ডুবোচরটি গত তিন বছর ধরে নদীপথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষায় চরটি পানির নিচে চলে গেলেও, পানি নামলেই আবার জেগে ওঠে। এর ফলে আন্ধারমানিক ও বাহাদুরপুর ঘাটের ট্রলারগুলো চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক চরাঞ্চলের মানুষ উপজেলা সদরে যাতায়াত করে এই ট্রলারে। এছাড়া কৃষিপণ্য, সার ও বিভিন্ন মালামালও একই পথে পরিবহন করা হয়।
কিন্তু ডুবোচরের কারণে এখন প্রতিদিন ট্রলারগুলোকে প্রায় চার কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে সময়ের পাশাপাশি ব্যয় ও দুর্ভোগ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মাঝি ও কৃষকরা।
জাহাজের মাস্টার মো. বাচ্চু মিয়া বলেন,
“বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে জাহাজটি ডুবোচরে আটকে যায়। আজ আট দিন ধরে আমরা বসে আছি। চট্টগ্রাম থেকে টিএসপি সার নিয়ে নগরবাড়ি যাচ্ছিলাম। সময়মতো সার না পৌঁছালে কৃষকের বড় ক্ষতি হবে। প্রতি বছরই এই এলাকায় একই সমস্যা হয়।” তিনি আরও বলেন, “ডুবোচর কেটে নৌরুট পরিষ্কার না করলে ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ দ্রুত ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হোক।
আন্ধারমানিক ঘাটের ট্রলারের মাঝি শাহীন জানান, “প্রতি বছর বর্ষা শেষে এই জায়গায় চর উঠে যায়। আমরা চরাঞ্চলের মানুষকে পারাপার করি। এখন ডুবোচরের কারণে ৩-৪ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে সময়ও লাগে বেশি, তেলের খরচও বাড়ে। ড্রেজিং না করলে এখানে কোনো নৌযান চলতে পারবে না।”
আরেক মাঝি অসীম বলেন, আমাদের এখান থেকে প্রতিদিন ছয়টি ট্রলার চলে চরাঞ্চলে। আগে নদীর মাঝ দিয়ে সরাসরি যাওয়া যেত, এখন বালুচর ঘুরে যেতে হচ্ছে। নদীতে পানি থাকলেও গভীরতা নেই।
বিআইডব্লিউটিএর আরিচা অঞ্চলের ড্রেজিং ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, এই অংশে ড্রেজিং কাজ বর্তমানে আমাদের আওতায় নেই। আমরা সাধারণত নিয়মিত নৌরুট ক্লিয়ার রাখি। তবে যদি নাব্য সংকট দেখা দেয়, তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ড্রেজিং করা হয়।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি জাহাজে একজন পাইলট থাকে, যিনি নদীর গভীরতা ও স্রোত নির্ধারণ করে চলাচল করেন। ধারণা করা হচ্ছে, এমভি আম্বু হালিমা-৪ জাহাজটিতে সম্ভবত পাইলট ছিলেন না; থাকলে হয়তো এমনটা হতো না। কারণ পাইলটরা পানির রং ও প্রবাহ দেখেই বুঝে নিতে পারেন কোথায় নাব্য কম।
নাব্য সংকটের কারণে উপজেলার হরিণাঘাট, সেলিমপুর ও দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। কৃষিপণ্য পরিবহনে বিলম্ব, নৌযান চলাচলে বাধা, আর ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।
শনিবার ড্রেজিং করে জাহাজ টি উদ্ধার করা হয়।
পদ্মা নদীর এ অংশে প্রতি বছর বর্ষা শেষে নাব্য সংকট দেখা দেয়, যা এখন রূপ নিয়েছে স্থায়ী সমস্যায়। এভাবে নদীর বুকে চর জেগে উঠতে থাকলে একদিকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে নদীপথে পণ্য পরিবহনও ঝুঁকিতে পড়বে।
নৌরুট সচল রাখতে দ্রুত ড্রেজিং কার্যক্রম, নিয়মিত গভীরতা পর্যবেক্ষণ ও স্থানীয় পর্যায়ে তদারকি এখন সময়ের দাবি।
“নদী সচল থাকুক, জীবন চলুক।” এমনটাই প্রত্যাশা চরাঞ্চলবাসীর
© ২০২০-২০২৫ তরঙ্গ টিভি, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।