বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় জেএসএস (জনসংহতি সমিতি)-এর সাংগঠনিক কাঠামো দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। মাঠপর্যায়ে সমন্বিতভাবে পরিচালিত এই তৎপরতার ফলে এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি একটি শটগান উদ্ধার ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততা নতুন করে শঙ্কা বাড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়িতে জেএসএসের এই সাংগঠনিক বিস্তার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা কমিটির সভাপতি মং মং মারমা ও সাধারণ সম্পাদক মংনু হেডম্যান। ইউনিয়ন পর্যায়ে বাইশারী ইউনিটের দায়িত্বে আছেন নিলামং মারমা। এই নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে পাহাড়ি এলাকায় সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে ‘সোর্স’ হিসেবে নিযুক্ত কিছু ব্যক্তি নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ, জনসম্পৃক্ততা এবং সম্ভাব্য সদস্য সংগ্রহে কাজ করে চলেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন মংড়ী চাক (পিতা: মৃত মংছাচিং), যিনি বর্তমানে আশিকা এনজিওতে কর্মরত। এনজিও কর্মীর ছদ্মাবরণে তিনি বাইশারীসহ আশপাশের এলাকায় সরেজমিনে সংগঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন পাইথুই চাক, মংছা অং, এবং লাক্যজাই চাক। এদের মধ্যে লাক্যজাই চাক নাইক্ষ্যংছড়ি এসিল্যান্ড অফিসের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত থাকলেও বাস্তবে জেএসএসের সাংগঠনিক দিক নির্দেশনায় ভূমিকা রাখছেন বলে স্থানীয়দের দাবি।
এদিকে সম্প্রতি বাইশারী ইউনিয়নের হেডম্যান চাকপাড়া সংলগ্ন একটি জঙ্গল থেকে স্থানীয়রা একটি অব্যবহৃত শটগান উদ্ধার করে। সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে বারবার থানায় জানানো হলেও পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তৎপরতা না দেখানোয় বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শটগানটি বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকায় পড়ে ছিল, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে এটি জেএসএস'র অথবা অন্য কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত বা অস্ত্রের উৎস অনুসন্ধানের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
এই পরিস্থিতিতে নাইক্ষ্যংছড়িতে একটি সুসংগঠিত জেএসএস-নেতৃত্বাধীন নেটওয়ার্কের সক্রিয়তা স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে সংগঠিত এই কর্মকাণ্ডের পেছনে আদতে একটি আধা-সামরিক কাঠামো গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে কিনা, সে প্রশ্নও জোরালো হচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই নেটওয়ার্ক দ্রুত নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে নাইক্ষ্যংছড়ি এবং আশপাশের এলাকায় জেএসএস এবং সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে সংঘাত, সন্ত্রাস ও অপহরণসহ আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে।