1. talukdermdsohel27@gmail.com : Md Sohel : Md Sohel
  2. tv@tarangotv.com : তরঙ্গ টিভি : তরঙ্গ টিভি
  3. info@www.tarangotv.com : তরঙ্গ টিভি :
সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৭:২১ অপরাহ্ন

নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তিনটি খুনের তথ্য পেল পুলিশ

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

কেরানীগঞ্জে অজ্ঞাতপরিচয় নারীর বস্তাবন্দি খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তিন খুনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মহিউদ্দিন হাওলাদার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা চত্বরে
কেরানীগঞ্জে অজ্ঞাতপরিচয় নারীর বস্তাবন্দি খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তিন খুনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মহিউদ্দিন হাওলাদার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা চত্বরেছবি: প্রথম আলো
ঢাকার কেরানীগঞ্জে অজ্ঞাতনামা নারীর বস্তাবন্দী খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে একসঙ্গে তিনটি খুনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল (৩১)। মুঠোফোনে রিচার্জ কার্ডের সূত্র ধরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন মহিউদ্দিনের সাবেক স্ত্রী বীথি আক্তার (২৪), বীথির চার বছরের শিশুসন্তান মো. রাফসান এবং ভাড়াটে নূপুর আক্তার (২৫)। মহিউদ্দিন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গোয়ালবাড়িয়া এলাকার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে।

 

আজ সোমবার বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, গত শুক্রবার রাতে ৯৯৯-এ কল পেয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর বাঘাবাড়ি এলাকায় সড়কের পাশে পড়ে থাকা একটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তা থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের হাত-পা ও মাথা না থাকায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। গতকাল রোববার বিকেলে আবারও ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পোস্তগোলা সেতুর পূর্ব পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ভাসমান অবস্থায় মানবদেহের তিনটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে তদন্ত চালাতে থাকে। একপর্যায়ে শুক্রবার উদ্ধার করা খণ্ডিত মরদেহের পাশে মুঠোফোন রিচার্জ করার একটি কার্ডের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই কার্ডের সূত্র ধরে মহিউদ্দিন হাওলাদারকে শনাক্ত করে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন জুরাইন রেললাইন এলাকা থেকে আটক করা হয়। পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে মহিউদ্দিন তিনটি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তিতে মহিউদ্দিন জানান, তাঁর কারখানার কর্মী ছিলেন নিহত বীথি আক্তার। কর্মক্ষেত্রে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৭ সালে তাঁরা গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে মহিউদ্দিনের পরিবার বিষয়টি জানতে পারলে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর রুবেল নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন বীথি আক্তার। তাঁদের সংসারে এক শিশু জন্ম নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মহিউদ্দিন ফেসবুকে বীথির সন্ধান পেয়ে তাঁর সঙ্গে আবারও সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে বীথি আক্তার রুবেলের সংসার ছেড়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে মহিউদ্দিনের কাছে ফিরে আসেন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগ এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। মহিউদ্দিন একই সময়ে ঢাকার জুরাইনে তাঁর প্রথম স্ত্রীর সঙ্গেও বসবাস করছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বীথি পুনরায় বিয়ের জন্য মহিউদ্দিনকে চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝগড়া লেগেই থাকত।

মহিউদ্দিনের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুক্রবার সকালে তাঁদের মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে মহিউদ্দিন বীথি আক্তারের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে তাঁকে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডটি বীথির চার বছরের শিশুপুত্র দেখে ফেলায় তাকেও শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন মহিউদ্দিন। ঘটনাটি একই ফ্ল্যাটের সাবলেট ভাড়াটে নূপুর আক্তার দেখে ফেললে তাঁকেও একই কায়দায় হত্যা করা হয়।

তিনটি খুনের পর মহিউদ্দিন বাড়ির দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে জুরাইন এলাকার তাঁর প্রথম স্ত্রীর কাছে চলে যান। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পর একটি দোকান থেকে ছয়টি প্লাস্টিকের ব্যাগ ও একটি ছুরি কিনে পুনরায় ঘটনাস্থলে ফিরে তিনটি মরদেহ শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে প্রথমে শিশুর মরদেহ ছয় টুকরা করেন। পরে ওই টুকরাগুলো একটি বস্তায় ভরে সেটি কাঁধে করে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া বাজারে নিয়ে যান। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বেয়ারা পূর্ব পাড়া এলাকায় ঝোপঝাড়ের মধ্যে খণ্ডিত মরদেহ ফেলে দেন। এরপর ফিরে এসে বীথি ও নূপুরের মরদেহ টুকরা করেন এবং সেগুলো কয়েকটি ব্যাগে ভরেন। পরে দুটি বস্তা তিনি পোস্তগোলা সেতু থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলেন। সন্ধ্যার দিকে নূপুরের খণ্ডিত মরদেহসংবলিত একটি বস্তা কেরানীগঞ্জের মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে ফেলে দিয়ে আসেন। সেদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে আবারও বীথির মরদেহের বাকি খণ্ডিত অংশের কয়েকটি বস্তা পোস্তগোলা সেতুর ওপর থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও নিহতদের মুঠোফোন আলাদা করে নদীতে ফেলে দিয়ে মহিউদ্দিন তাঁর জুরাইনের বাসায় ফিরে যান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, মহিউদ্দিন মাদকাসক্ত ছিলেন। নূপুর ও রাফসানের মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা গেলেও বীথির মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা যায়নি। এ ঘটনায় বীথির বোন সাথী আক্তার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলা রেকর্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তিন খুনের তথ্য পায়। এ ঘটনায় জড়িত মহিউদ্দিনের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, উপপরিদর্শক ইবনে ফরহাদ, জহুরুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© তরঙ্গ টিভি
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট