এর পর কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তখন থেকে আমার সঙ্গে কী আচরণ করা হয়েছে তা বলার ভাষা নেই। তবে এতটুকু বলে পারি, একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যারিস্টার, সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য এবং সর্বোপরি নারীর সঙ্গে যেভাবে আচরণ করার কথা ছিল তার কোনোটাই করা হয়নি। যেভাবে মুহূর্তের মধ্যে আমাকে জঙ্গি তকমা লাগানো হয়, তা বলার ভাষা নেই। যখন আমাকে র্যাব-৭ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল তখন আমার ছেলে ও পরিবারের অন্যদের বারবার মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। র্যাব-৭ তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাকে বলি, যা করার আমাকে করেন। পরিবারের কাউকে জড়াবেন না। টর্চারের একপর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে মিফতাকে বলি, ‘জাস্ট শুট মি’। বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীকে অনেকেই আইনি সহায়তা দিয়েছেন।
তারাও জামিনের জন্য আমার কাছে আসতে থাকেন। শুরু থেকে হেফাজতের নেতাদের দাবি ছিল- দুই মাসের মধ্যেই তাদের জামিন করাতে হবে। তাদের জামিনের জন্য ৩০০ থেকে ৩৫০টি পিটিশন উচ্চ আদালতে ফাইল করতে হয়। তারা আইনি খরচের জন্য কিছু অগ্রিম অর্থ দেয়। কিন্তু তাদের প্রত্যাশিত সময়ে অনেকের জামিন করাতে পারিনি। জামিন করাতে ব্যর্থ হয়ে ‘সানজিদা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ব্যবসায়িক ব্যাংক হিসেবে টাকাগুলো ফেরত দিই। মূলত, টাকা ফেরত দেওয়ার প্রমাণপত্র তৈরি করতে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করি। টাকা ফেরতের প্রমাণপত্র দিয়েই আমাকে র্যাব ‘জঙ্গির অর্থদাতা’ বানিয়ে দেয়। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির এ নেত্রী বলেন, ‘২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির চট্টগ্রাম মহাসমাবেশকে ঘিরে একটি গায়েবি মামলা করে সরকার।
এ মামলায় আসামিদের একজন ছিলেন মনিরুজ্জামান ডন। ওই মামলায় তার জামিন করাই আমি। এখন মনে হচ্ছে মনিরুজ্জামান ডন আমার কাছে জামিনের জন্য আসাটাই রহস্যজনক।’ কারাগারের দিনগুলোর বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘মিথ্যা’ অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারে ছিলাম ১০ মাস আট দিন। প্রথম দিন আমাকে কারাগারে ৫৬ জনের একটি নারী ওয়ার্ডে রাখা হয়। যেখানে মাদক ব্যবসায়ী ও খুনের আসামি বন্দি ছিলেন। সারা রাত লোহার ফটক ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভয়ে পেছনে থাকাতে পারিনি। সাড়ে তিন মাস পর সন্তানদের দেখতে দেওয়া হয় আমাকে। অপমানে আমার বাবা স্ট্রোক করেন। এই দীর্ঘ সময়টি ছিল খুবই করুণ।
প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অত্যন্ত কষ্টদায়ক। শাকিলা বলেন, আমি শুধু সংস্কৃতিমনা ছিলাম না। প্রাশ্চাত্য ধাচের মানুষও ছিলাম। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি আবৃত্তি করতাম, নাচতাম, গান গাইতাম। কিন্তু তাদের স্বার্থে আমাকে জঙ্গি তকমা লাগিয়েছে। শুধু জঙ্গি না। যা যা তকমা লাগানো দরকার ছিল তার সবই লাগিয়েছে তারা। সেভাবে আমি জঙ্গি হয়েছি। তখন আমার অনুভূতিই মরে গিয়েছিল। নিজের মধ্যে কোনো অনুভূতিই ছিল না। একটা মানুষকে কীভাবে ধ্বংস করা হয় তার জ্বলন্ত প্রমাণ আমি। আমার পেশা ও সংসার জীবন শেষ করে দিয়েছে। আমার স্বামীর ব্যবসা ধ্বংস করে দিয়েছে। যতভাবে শেষ করা যায়, তার সবটুকুই তারা করেছে। তার প্রতি হওয়া ‘অন্যায়ের’ বিচার সৃষ্টিকর্তার ওপর চেড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমি মামলা করব না। প্রাকৃতিকভাবে তারা শাস্তি পাচ্ছে। আরও পাবে। তারা জানে আমার সঙ্গে কী করেছে। কীভাবে আমাকে জঙ্গি সাজিয়েছে। তাদের স্বার্থে কী করেছে।
Leave a Reply