
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় গত ১২ মার্চ ‘মব’ সৃষ্টি করে প্রকাশ্যে পুলিশ পিটিয়ে জুলাই আন্দোলনের ছাত্র হত্যার পাঁচ মামলার আসামি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম মোস্তফাকে ছিনিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই আরেক নেতা আনিসুর রহমান সোহাগ।
আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার এ মিশন বাস্তবায়নে সোহাগকে সহায়তা করেন দুই সহযোগী- আরিফুল হাসান মীর সাগর ও সোহেল শাহরিয়ার। আর পুরো মিশন বাস্তবায়নে ১৭ জন সরাসরি হামলায় নেতৃত্ব দেন।
অভিযুক্ত সোহাগ জুলাই আন্দোলনের ১১টি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। তবে ছিনতাই হওয়া গোলাম মোস্তফা দেশে নাকি দেশের বাইরে পালাতে সক্ষম হয়েছেন, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফাসহ অন্যরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদপুরে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে ১২ মার্চ মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকার বি-ব্লকের একটি সড়ক থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গোলাম মোস্তফাকে এক নম্বর আসামি করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহদাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলার তদন্ত শেষে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত গোলাম মোস্তফা, মূল পরিকল্পনাকারী আনিসুর রহমান সোহাগসহ মোট ১৭ জনকে অভিযুক্ত করে গত মাসে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- আরিফুল হাসান মীর সাগর, সোহেল শাহরিয়ার, দেলোয়ার হোসেন মন্ডল, আব্দুল্লাহ শেখ, সাইফুজ্জামান শোভন, রাজিব শিকদার, আসলাম শিকদার, রাকিব ঠাকুর, হাসানাত সরদার ওরফে হাসান, মেহেদী হাসান সাব্বির, জহিরুল ইসলাম, আরিফিন আলম ওরফে ইমন, আসাদুজ্জামান আসাদ, সানিয়াত সরদার ও হাসিব মুন্সী।
জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসামিরা সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে এবং পুলিশের ওপর হামলা করে আহত করেছে। এগুলো ভিডিও ফুটেজে প্রমাণ আছে। অভিযুক্তদের এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেওয়া আনিসুর রহমান সোহাগ লালমাটিয়ার অ্যাভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য সোহাগের বিরুদ্ধে জাল সনদে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অধ্যক্ষ বনে যাওয়া, প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসায়িক অংশীদারদের ঠকানো, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস হাফিজুর রহমান লিকুর সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্বে থাকার অভিযোগ রয়েছে।
পল্লবী থানা, মোহাম্মদপুর, ভাটারা, শাহআলী, গুলশান, চকবাজার, পল্টন, মিরপুর মডেল থানা, বাড্ডা থানা ও রামপুরা থানায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের হত্যা ও হত্যাচেষ্টার ১১টি মামলার আসামি তিনি।
আদালতে দেওয়া পুলিশের চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার সময় অ্যাভেরজ স্কুলের দ্বিতীয় তলায় অফিস কক্ষে অবস্থান করছিলেন আনিসুর রহমান সোহাগ, আরিফুল হাসান মীর সাগর ও সোহেল শাহরিয়ার। তারা নিচে নেমে হুকুম দিয়ে হামলার নেতৃত্ব দেন। এতে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. শহিদুল আহত হয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে আসামিরা দেশ ত্যাগের চেষ্টা করছে— এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইমিগ্রেশন শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী এই গোলাম মোস্তফা। তার নামে মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট ও চকবাজার থানায় জুলাই আন্দোলনে পাঁচটি হত্যা মামলা রয়েছে।