বাংলাদেশে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন ও নীতিমালা মেনে নেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন করেছেন সেজন্য সাধুবাদ জানিয়েছি। কিন্তু এই যে তৃতীয় প্রজাতির মানুষদের নিয়ে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছেন- এরা দেখতে নারী-পুরুষ নয়, তৃতীয় লিঙ্গের মতোও মনে হয় না। তারা ভিনদেশি ও ভিনপ্রজাতির।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জেলা খেলাফত মজলিস আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ সমাবেশে আয়োজন করা হয়।
নারী বিষয়ক কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হুঁশিয়ারি দিয়ে মামুনুল হক বলেন, আশ্চর্যজনক বিষয় হলো ফ্যাসিবাদী আমলেও ইসলামবিরোধী শেখ হাসিনা এ দুঃসাহস দেখায়নি। এ সংস্কার কমিশনের স্পর্ধা কোন জায়গায় গিয়ে উপনীত হয়েছে ভাবা যায়? আমরা আগামী ৩ মে পর্যন্ত আল্টিমেটাম ঘোষণা করেছি। তার আগে কুখ্যাত ভিনদেশি এজেন্ট নারী বিষয়ক কমিশন দ্বারা আল্লাহর কোরআনকে নিয়ে কটাক্ষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ সকল জায়গায় বক্তব্য পরিষ্কার করেছি। সংবিধান সংস্কারের নামে বহুত্ববাদ ও শিরকি মতবাদ বাংলাদেশে আমদানি করার ষড়যন্ত্র বুকের তাজা রক্ত দিয়ে রুখে দেব। বহুত্ববাদ বাতিল করে সংবিধানে মহান আল্লাহর উপর বিশ্বাস পুনর্বহাল করতে হবে। এটি আমাদের কোনো আবদার নয়, দাবি। এই দাবি বাস্তবায়ন না হলে আমরা যুদ্ধের ময়দানে যেতে প্রস্তুত থাকব।
খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, স্বৈরতন্ত্র থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছি নতুন কোনো স্বৈরাচারের যাঁতাকলে পৃষ্ঠ হওয়ার জন্য নয়। ১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, দিল্লির গোলামি করার জন্য নয়। ভারতীয় আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছি আমেরিকার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য না। একটি আধিপত্যবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই।
দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও ইসলাম একসূত্রে গাঁথা। আমরা বৃহৎ একটি ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। সকলকে দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রস্তুত হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের স্পিরিটকে সম্মান জানিয়ে এ দেশে রাজনীতি করতে হবে। শাপলা চত্বর, বিডিআর বিদ্রোহসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে সর্বাগ্রে। জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গণহত্যার বিচার না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।
খেলাফত মজলিস বাংলাদেশ ফেনী জেলার সভাপতি মুহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহম্মদ, যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ফেনী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এয়াকুব নবী, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নান, সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহিম, ইসলামী আন্দোলন ফেনী জেলার সেক্রেটারি মাওলানা একরামুল হক, হেফাজতে ইসলামের ফেনী জেলা সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক, আন্তর্জাতিক ক্বেরাত সম্মেলনের জেলা সভাপতি মাওলানা আবদুল ফাত্তাহ, যুব মজলিসের জেলা সভাপতি শাহ মোহাম্মদ জুনায়েদ প্রমুখ।
এ সময় খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় ও জেলার পর্যায়ের নেতাকর্মী, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply