রাজশাহীর বাঘায় বন্যায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭৬টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এক সপ্তাহ যাবত তারা পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করছেন। গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর নিচপলাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে সাংবাদিক এসেছেন শুনে তাৎক্ষণিক ২৪ নাম্বার ঘরে বসবাসকারী ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ এগিয়ে আসেন।
এরপর ২৫ নাম্বার ঘরের শাহিদা বেগম, ১৫ নাম্বার ঘরের সান্টু আলী, ৩৩ নাম্বার ঘরের মালেকা বেগম, ৩০ নাম্বার ঘরের রাশিদা বেগম, ৪১ নাম্বার ঘরের পাতা বেগম এগিয়ে এসে বলেন, বাবারে আমরা এখানকার সবাই এক সপ্তাহ থেকে পানির মধ্যে বসবাস করছি। কেউ কোনো সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করছি।
একটু এগিয়ে যেতেই ৭০ বছরের মনোয়ারা বেগম নামের এক বৃদ্ধা বারান্দায় চেয়ারে বসে আছেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী ইয়াছিন আলী ছয় মাস আগে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমার ২ মেয়ে ও ৪ ছেলে রয়েছে। সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেরা আছে তারা দেখাশোনা করে; কিন্তু সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা পায়নি।
মনোয়ারা বেগম বলেন, কয়েক দিন আগে একটি সাপ দেখতে পেয়ে ভয়ে সবাই আতঙ্কিত হয়ে যায়। সাপ, পোকামাকড়ের ভয়ে রাতে ঘুম হয় না।
এদিকে ৩৩ নাম্বার বাড়ির মালিক আবদুল মজিদ, ৩৪ নাম্বার বাড়ির মালিক জমসেদ আলী, ৩৯ নাম্বার বাড়ির মালিক সিমা বেগম, ৪৫ নাম্বার বাড়ির মালিক রুবিনা বেগম, ৪৪ নাম্বার বাড়ির মালিক রুমা খাতুন, ৪৮ নাম্বার বাড়ির মালিক রেহেনা খাতুন, ৪৩ নাম্বার বাড়ির মালিক আশা খাতুন, ৪০ নাম্বার বাড়ির মালিক চম্পা খাতুন এগিয়ে এসে বলেন- ‘ঘরে চাল আছে, কিন্তু রান্না করার জায়গা পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হলে কষ্ট লাঘব হতো।’
জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে খানপুর নিচপলাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রতিটি ঘরের জন্য দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দেয় সরকার।
সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের হাতে দলিল তুলে দেয়। থাকার কোনো জায়গা না থাকায় এই ঘরে তারা বসবাস করেন। ১৫-১৬ বছরে এখানে কোনো পানি উঠেনি। এবার হঠাৎ করে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উঠান দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তারা খুব কষ্টে আছেন। এখানে যারা বসবাস করেন তারা সবাই গরিব মানুষ। অনেক সময় তারা এলাকার বাইরে কাজ করেন ও সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে সংসার চালায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা বসবাস করেন তারা খুব দরিদ্র মানুষ। তারা দিন আনে দিন খায়। তারা সকালে কাজে বের হয়, আর সন্ধ্যায় বাড়ি আসেন। সারাদিন তারা বাইরে থাকেন। এলাকার মানুষ আমাকেও বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামে বন্যার পানি উঠেছে। বানভাসিদের সহযোগিতা শুরু করা হয়েছে। এদেরও সহযোগিতা করা হবে।