1. tv@tarangotv.com : তরঙ্গ টিভি : তরঙ্গ টিভি
  2. info@www.tarangotv.com : তরঙ্গ টিভি :
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন

ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত কুম্ভ মেলা আসলে কী?

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৬৩ বার পড়া হয়েছে

ভারতের প্রয়াগরাজ শহরে এখন চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাগম মহাকুম্ভ মেলা। প্রতি ১২ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় এই মহাকুম্ভ মেলা। এবছর এই মেলায় ৪০ কোটি মানুষ আসবেন বলে ভারতের সরকার ধারণা করছে।

মকর সংক্রান্তির ঠিক একদিন আগে, ১৩ই জানুয়ারি মেলা শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দিন প্রথম ‘শাহী স্নান’ দিয়ে শুরু হয়েছে কুম্ভ মেলার ধর্মীয় রীতি পালন। এবছর মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী নাগা সন্ন্যাসীরাই প্রথম শাহী স্নান করার অধিকারী। তারপর অন্যান্য সাধু-সন্ত এবং সাধারণ মানুষ গঙ্গা, যমুনা আর বর্তমানে অদৃশ্য সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে স্নান করেন।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাংশের বিশ্বাস অনুযায়ী কুম্ভ মেলায় গিয়ে নদীর নির্দিষ্ট সঙ্গম স্থলে স্নান করলে ‘মোক্ষ’ লাভ করা যায়।

প্রথম দিনে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ ওই সঙ্গমস্থলে স্নান করেছেন বলে জানানো হয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষের তরফে।

প্রয়াগরাজ শহরসহ গোটা উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন এ মেলার জন্য যেমন আয়োজন করেছে নিখরচায় থাকার জন্য তাঁবু, তেমনই নানা বিলাসবহুল ব্যবস্থাও আছে।

যার মধ্যে প্রতিদিনের ঘরভাড়া এক লাখ রুপি পর্যন্তও আছে।

দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বাইয়ের মতো বড় শহর থেকে কয়েকশো বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে, সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ সরকারি পরিবহন সংস্থা প্রায় সাত হাজার বাস চালাচ্ছে।

এবার কুম্ভ মেলার আয়োজনকে ‘ডিজিটাল কুম্ভ’ও বলছেন অনেকে।

মেলার জন্য বিশেষ অ্যাপ, কিউ আর কোড, গুগল ম্যাপ, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আত্মীয়-বন্ধুদের সন্ধান পাওয়া, বাস-ট্রেনের সময়সূচিসহ প্রায় সব কাজই ডিজিটাল মাধ্যমে করা হচ্ছে।

মহাকুম্ভের ধর্মীয় গুরুত্ব কী?

তিন ধরনের কুম্ভ মেলা হয়ে থাকে ভারতের চারটি শহর – হরিদ্বার, প্রয়াগরাজ, মধ্যপ্রদেশের উজ্জ্বয়িনী ও মহারাষ্ট্রের নাসিকে।মহাকুম্ভ ছাড়া পূর্ণ কুম্ভ এবং অর্ধ-কুম্ভেরও আয়োজন হয়। তবে মহাকুম্ভ শুধু প্রয়াগরাজেই হয়ে থাকে।

প্রতি ১২ বছর অন্তর ক্রমানুসারে হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিক ও প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলা হয়।হিন্দুদের একাংশের বিশ্বাস অনুযায়ী এবছর গ্রহ-নক্ষত্রের এমন যোগ রয়েছে যা ১৪৪ বছর পরে এলো।

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী সমুদ্র মন্থনের সময়ে রাক্ষস ও দেবতাদের মধ্যে ‘অমৃত’ নিয়ে লড়াই হয়েছিল।

এই ‘অমৃত’ পান করলে অমরত্ব পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস রয়েছে হিন্দু ধর্মে।

ওই লড়াইয়ের সময়ে কয়েক ফোঁটা অমৃত প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, নাসিক ও উজ্জ্বয়িনীতে পড়েছিল।পুরাণে এটাও বর্ণিত আছে যে অমৃতের কলসটি মর্ত্য থেকে স্বর্গে পৌঁছাতে ১২ দিন লেগেছিল।

আর দেবতাদের একদিন মর্ত্যের হিসাব অনুযায়ী এক বছর সময়কাল। সেজন্যই ১২ বছরে একবার করে পূর্ণ কুম্ভ আয়োজিত হয়।

নাগা সন্ন্যাসী ও শাহী স্নান

রীতি অনুযায়ী, হিন্দুদের কাছে পবিত্র সঙ্গমে প্রথম শাহী স্নান করতে পারেন নাগা সন্ন্যাসীরা। এ বছর তিনবার শাহী স্নানের দিন রয়েছে।

শাহী স্নানের দিন ছাড়াও আরও বিশেষ কিছু দিনে বিশেষ স্নান হয়। মনে করা হয় শাহী স্নানের রীতিটি ১৪শ থেকে ১৬শ শতকের মধ্যে চালু হয়েছিল।

স্নানের সময়ে সাধু সন্ন্যাসীদের চালচলন অনেকটা রাজকীয় হয়ে উঠত।

মনে করা হয় সেই ‘রাজকীয়’ বা ‘শাহী’ চালচলনের কারণেই এই বিশেষ স্নানের দিনগুলিকে শাহী স্নান বলা হয়ে থাকে।

তিনটি নদীর সঙ্গমস্থল, অর্থাৎ ত্রিবেণীতে শাহী স্নান করতে প্রথমে নামেন নাগা সন্ন্যাসীরা। এরপরে মহামণ্ডলেশ্বর এবং অন্যান্য সাধুরা স্নান করেন।

কুম্ভ মেলার যে অংশে সাধু-সন্ন্যাসীরা আখারা বা নিজেদের শিবির গেড়েছেন, সেদিকেই ভক্তকূলের বেশি ভিড় থাকে।

এরই মধ্যে ‘পঞ্চ-দশনাম জুনা আখরা’তে জড়ো হয়েছেন নাগা সন্ন্যাসীরা।

বিবস্ত্র হয়ে সারা গায়ে ভস্ম মেখে, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা জড়িয়ে বসে থাকা এই নাগা সন্ন্যাসীরা চিরকালই ভক্তদের অন্যতম মূল আকর্ষণ।

বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও ওইসব নাগা সন্ন্যাসীরা বিবস্ত্র হয়ে সামনে একটু আগুন জ্বালিয়ে বসে আছেন।

সেখানে হাজির ভক্তরা তাদের আশীর্বাদ নিচ্ছেন, আবার ছবিও তুলছেন।

এই নাগা সন্ন্যাসীদের অনেকেই অবশ্য ছবি তুলতে দিতে আপত্তি করেন।

এক নাগা সন্ন্যাসী বিবিসিকে বলেছেন, ‘সঠিকভাবে সাধনা করতে পারলে শীতকেও জয় করে ফেলা যায়। ভক্তির জোর অনেক, এর ফলেই আমাদের ঠান্ডা লাগে না।আমরা অঘোরী বাবা। বস্ত্রের বদলে আমরা গায়ে ভস্ম মেখে থাকি। তাতে ঠাণ্ডা কিছুটা কম লাগে।’

এছাড়াও আরও কয়েকজন সাধু এবার সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়েছেন।

এরা দাবি করছেন যে অনেক বছর ধরে একহাত ওপরে তুলে রয়েছেন তারা। নিজেদের এরা ‘ঊর্ধ্ববাহু’ সাধু বলছেন।

ডিজিটাল মহাকুম্ভ

এবছরের মহাকুম্ভে জড়ো হওয়া ভক্তদের সুবিধা করে দিতে উত্তর প্রদেশ সরকার সব ধরনের পরিষেবার সঙ্গেই ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

মেলার জন্য পৃথক অ্যাপ বানানো হয়েছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে চ্যাটবট হয়েছে, কিউ আর কোড স্ক্যান করে সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

এমনকি মেলায় নিখোঁজদের সন্ধানেও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

মহাকুম্ভের অ্যাপটি ১১টি ভাষায় দেখা যাচ্ছে।

যাত্রার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ‘টেন্ট সিটি’ যেখানে বানানো হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য, পর্যটক গাইড, ব্যবসায়িক ও জরুরি পরিষেবা – সবই পাওয়া যাচ্ছে এই অ্যাপ দিয়ে।

বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই মহাকুম্ভের চারটি পৃথক কিউআর কোড ভারতের সর্বত্র বিজ্ঞাপনের আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এমনকি কলকাতার বহু বাসস্ট্যান্ডে হোর্ডিং লাগানো হয়েছে ওই কিউআর কোডসহ।

এর মধ্যে একটি কিউআর কোড আছে প্রশাসনিক তথ্যের জন্য।

সবুজ রঙের ওই কোড স্ক্যান করলেই ২৮ পাতার একটি পিডিএফ ডকুমেন্ট খুলে যাচছে, যেখানে মেলার সঙ্গে সংযুক্ত সব প্রশাসনিক অফিসার এবং থানার ফোন নম্বর পাওয়া যায়।

আবার গুগলের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মহাকুম্ভ মেলার পৃথক ম্যাপও বানানো হয়েছে।

লাগানো হয়েছে ৩২৮টি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্যামেরা।

নজরদারির জন্য এইসব ক্যামেরার সঙ্গেই আছে ড্রোনও।

সরকার বিনা-পয়সায় ভক্তদের থাকার জন্য হাজার হাজার তাঁবু লাগিয়েছে – সেই এলাকাটিকে বলা হচ্ছে ‘টেন্ট সিটি’।

আবার পাঁচ তারা হোটেলের মতো বিলাসবহুল ব্যবস্থাও আছে এখানে। ওই বিলাসবহুল টেন্ট বা ভিলার এক রাতের ভাড়া এক লাখ রুপির থেকেও বেশি।

ভারতীয় রেলওয়ে ক্যাটারিং সার্ভিস এরকমই একটা আলাদা ‘টেন্ট সিটি’ বানিয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহাকুম্ভ গ্রাম’।

এই ‘গ্রাম’টিতে সুপার-ডিলাক্স ঘর, টেন্ট আর ভিলা বানিয়েছে তারা। সেখানে প্রতিদিনের ঘরভাড়া ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার রুপি।

আবার আরৈল ঘাটের পাশে একটা ‘ডোম সিটি’ হয়েছে। জমি থেকে ১৮ ফুট উঁচুতে গম্বুজ আকৃতির কাঁচের ঘর বানানো হয়েছে।

ওই হোটেলটির পরিচালক ভানু প্রসাদ সিং বিবিসিকে বলেছেন, একটা পাঁচ তারা হোটেলে যা যা সুবিধা থাকে, তার সবই এখানে পাওয়া যাবে।

দেশি-বিদেশি ভক্তরা আসেন এখানে। যে দিনগুলোতে শাহী স্নান আছে, সেইসব দিনে আমাদের হোটেলের ঘরভাড়া এক লাখ ১১ হাজার রুপি।অন্যান্য দিনে দিনপ্রতি ৮১ হাজার রুপি ভাড়া তাদের বিলাসবহুল হোটেলে।

শহরের অন্যদিকে প্রশাসন বিনাপয়সায় ভক্তদের থাকার যে বন্দোবস্ত করেছে, সেখানে একজন সর্বোচ্চ সাত দিন থাকতে পারেন।

শোওয়ার জন্য গদি, লেপ, পরিস্রুত পানীয় জল যেমন পাওয়া যায়, তেমনই ওষুধপত্রও থাকে সেখানে।

এইসব অস্থায়ী তাঁবু বা বিলাসবহুল কামরা ছাড়াও স্থায়ী যেসব হোটেল আছে, সেগুলোর ভাড়া আকাশছোঁয়া হয়ে গেছে।

Leave a Reply

আরো সংবাদ পড়ুন
© তরঙ্গ টিভি
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট