অর্থ লোভে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভুল চিকিৎসা করার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এবং কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. কেএম আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তার ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) তরুণ কর্মকর্তা হেলাল।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন হেলালের পরিবার ও স্বজনরা।
হেলালের ছোট বোন উম্মে ছাবেরীন স্মৃতি জানান, তার ভাই বাম চোখে ঝাপসা দেখার কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। পরে ডা. আতিকের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে প্রাণ হারান।
তিনি বলেন, আমরা এই চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং চিকিৎসা খাতের পরিবর্তন চাই। এভাবে আর কত প্রাণ নিভে যাবে, কে নেবে দায়? আমার ভাইয়ের দুটি সন্তান এখন এতিম হয়ে গেছে। আমরা এই চিকিৎসকের বিচার ও লাইসেন্স বাতিল চাই।
হেলালের মামা মোহাম্মদ আসাদ আলী ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, অপারেশনের আগে ও পরে ডা. আতিকের বক্তব্যে বিরাট অমিল ছিল।
তিনি বলেন, ডা. আতিক অপারেশনের আগে বলেন, এটি ছোট সার্জারি, তিন দিনের মধ্যে রোগী হেঁটে বাসায় ফিরবেন। অপারেশনের পরে জানান, এটি বড় অপারেশন ছিল এবং দোয়া করতে বলেন। আমরা সিটি স্ক্যান রিপোর্ট চাইলে তা দেননি, বরং রিপোর্ট গায়েব করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে ছাবেরীন স্মৃতি জানান, এমআরআই রিপোর্টে হেলালের ব্রেনে ৩.৬৬×২.৬৪×২.১৮ সেমি আকারের Macroadenoma of pituitary gland ধরা পড়ে। গত ১২ জুলাই কাকরাইল ইসলামি ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে সাক্ষাতে ডা. আতিক দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দেন।
তিনি জানান, নাকের ভেতর দিয়ে এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে টিউমার অপসারণ করা হবে—যা তিনি ‘মাইনর অপারেশন’ বলে দাবি করেন এবং একে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে উপস্থাপন করেন।
ডা. আতিক নিজেকে জাপান-প্রশিক্ষিত বাংলাদেশের একমাত্র এন্ডোস্কপিক নিউরোসার্জন হিসেবে পরিচয় দিয়ে শতভাগ সুস্থতার গ্যারান্টি দেন এবং বলেন, চার দিন পর হেলাল স্বাভাবিকভাবে অফিস করতে পারবেন।
পরিবারের অভিযোগ, নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে অপারেশন করতে চাইলে ডাক্তার নিরুৎসাহিত করেন এবং ভয় দেখান যে বাম চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বিদেশে চিকিৎসার প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়ে দাবি করেন, বিদেশে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই আমার কাছে ফিরে এসে অপারেশন করিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, রোগীকে দ্রুত অপারেশনে রাজি করাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন ডা. আতিক। যাতে সময় পেলে হেলাল অন্যত্র চিকিৎসা নিতে না পারেন এবং এতে তিনি আর্থিকভাবে বঞ্চিত না হন।
সংবাদ সম্মেলনে হেলালের পরিবার ও স্বজনরা ডা. আতিকুল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক বিচার, চিকিৎসক লাইসেন্স বাতিল এবং ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার দায় নিরূপণ করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।