
ভূমিকম্প হল পৃথিবীর অভ্যন্তরে টেকটনিক প্লেটগুলির আকস্মিক স্থানচ্যুতির ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অঞ্চল এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি শুধু ভূমির কম্পনেই সীমাবদ্ধ নয়; এর পরিণামে সুনামি, ভূমিধ্বস, লিকুইফ্যাকশন, আগুন, বাঁধ ভেঙে বন্যা এবং মহামারীও দেখা দিতে পারে। তাই শুধু ভূমিকম্পের পূর্বাভাস নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ও প্রস্তুতি গড়ে তোলা অপরিহার্য।
ভূমিকম্পের কারণ ও ঝুঁকি:
টেকটনিক প্লেটগুলির সংঘর্ষ, স্লাইডিং বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে শক্তি নির্গত হয়, যা ভূমিকম্পের আকারে প্রকাশ পায়। ঢাকা অবস্থিত ইন্দো‑বার্মা সাবডাকশন জোনের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে ৭ মাত্রারও বেশি ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। অধিকাংশ ভবনই পুরনো নির্মাণবিধি অনুযায়ী তৈরি আবার বহু ভবন আছে যা কিনা নিয়মনিতি ছাড়াই বানানো হয়েছে। সেগুলোর কোনটিই ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নয়। ফলে একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি ব্যাপক হবে।
ভূমিকম্পের পরিণতি:
সুনামি– সমুদ্রতলের ভূমিকম্পের কারণে উপকূলীয় এলাকায় বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে।ফলে অনেক এলাকা পানিতে স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে বিলিন হতে পারে।
ভূমিধ্বস ও ভূমিস্খলন – পাহাড়ি অঞ্চলে মাটি ও পাথর নিচে নেমে আসে।
লিকুইফ্যাকশন – ভেজা মাটি কম্পনের সময় তরল হয়ে যায়, যার ফলে ভবন ও রাস্তা ডুবে যায়।
আগুন ও গ্যাস লিগেজ- ভাঙা পাইপ থেকে গ্যাস লিগেজ হয়ে আগুন লাগতে পারে।
বাঁধ ভেঙে বন্যা– জলাধারের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাৎক্ষণিক বন্যা হয়।
সংক্রামক রোগ– ধ্বংসপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও দূষিত পানি থেকে মহামারী ছড়াতে পারে।
সচেতনতা ও প্রস্তুতির উপায়:
জনসচেতনতা কর্মশালা–স্কুল, কলেজ ও স্থানীয় সংগঠনে নিয়মিত ভূমিকম্প বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া।
বাড়ির নিরাপত্তা পরীক্ষা– দেয়াল, ছাদ ও দরজার স্থায়িত্ব পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় শক্তিশালীকরণ করা।
এমার্জেন্সি কিট– প্রথম সাহায্য সামগ্রী, পানি, খাদ্য, টর্চ, ব্যাটারি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা।
পলায়ন পরিকল্পনা- বাড়ির প্রতিটি সদস্যের জন্য নিরাপদ স্থান ও পলায়ন পথ নির্ধারণ করা।
সম্প্রদায়িক কেন্দ্র– প্রতিবেশীদের সাথে মিলে একটি সমন্বিত উদ্ধার ও ত্রাণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
বিল্ডিং কোড মেনে চলা–নতুন নির্মাণে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী মানদণ্ড অনুসরণ করা এবং পুরনো ভবনগুলিকে জরুরি ভাবে পুনঃসংস্কার করা।
৪. সরকার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
ভূমিকম্প পূর্বাভাস কেন্দ্র– বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাথে সহযোগিতায় ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন।
আন্তর্জাতিক তহবিল–বিশ্ব ব্যাংক, ইউএনডিপি ও অন্যান্য দাতা সংস্থার সহায়তায় ভূমিকম্প প্রতিরোধী অবকাঠামো নির্মাণ।
বীমা ব্যবস্থা–ভূমিকম্প বীমা পলিসি প্রচার ও বাধ্যতামূলক করা, যাতে ক্ষয়ক্ষতি পূরণে সহায়তা পাওয়া যায়।
উপসংহার:
ভূমিকম্প একটি অনিয়ন্ত্রিত প্রাকৃতিক ঘটনা, কিন্তু তার ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে আমাদের প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে। সচেতনতা, সঠিক নির্মাণবিধি, সম্প্রদায়িক সহযোগিতা এবং সরকারি নীতির সমন্বয়ে আমরা এই বিপর্যয়ের প্রভাবকে অনেকাংশে কমাতে পারি। বিশ্বব্যাপী প্রতিটি মানুষ যদি নিজ নিজ অবস্থানে এই বিষয়ে সচেতন হন, তাহলে ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে আমরা আরও শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।
© ২০২০-২০২৫ তরঙ্গ টিভি, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।