গত ৪ জুলাই খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ঘোরখানা শাহানশাহ হক ভান্ডারী সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসা ৭ম শ্রেণির ছাত্র ও ছদুরখীল এলাকার আবদুল জলিল এর পুত্র মো. সোহেল(১৪) অপহরণের ১২ দিন পর অপহৃত সোহেলের অর্ধগলিত, হাত-পা ও মুখ বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী।
এর আগে অপহৃত সোহেলের পরিবারের দায়েরকৃত মামলার ৫ আসামীর মধ্যে ৩ জনকে পুলিশ আটক করলেও ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মংসানু মারমাসহ অন্যরা (৩৫) অধরা রয়ে যায়। গতকাল ১৯ জুলাই সকালে উপজেলার গহীন অরণ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানে আটক হয় সোহেল অপহরণ ও হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও জনপদের সশস্ত্র সন্ত্রাসী মংসানু মারমা। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ৭জনকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জুলাই রাতে উপজেলার ছদুরখীল এলাকায় নিজ বাড়ীতে ফেরার পথে মো. সোহেল (১৪) নামের এক মাদরাসা ছাত্র নিখোঁজ হয় এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা অপহৃত সোহেলের মুক্তির শর্তে ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন! এ ঘটনায় প্রতিবেশী কয়েকজনকে সন্দেহ করে গত ১১জুলাই অপহৃতের পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে জড়িত সন্দেহ কসমকার্বারি পাড়ার সম্বু কুমার ত্রিপুরা (৩৬), গোরখানা এলাকার মো. মাঈন উদ্দিন (২১) ও মো. ইয়াছিন মিয়া (২৮)কে আটক পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা অপহরণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলেও অপহৃতের সন্ধান দিতে পারেনি। পরবর্তীতে গত ১৬ জুলাই উপজেলার বুদংপাড়া নামার পাড়ার গহীন অরণ্যের একটি ঝিরি থেকে অপহৃত সোহেল এর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। এর পর আরও দুইজনকে আটক করা হলেও ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় সোহেল হত্যার মূল রহস্য উদ্ধারে কাজ করছিল মানিকছড়ি থানা পুলিশ ও সিন্দুকছড়ি জোনের চৌকস সেনাবাহিনী।
যার ফলে ১৯ জুলাই শনিবার সকালে উপজেলার গহীন অরণ্যে থেকে মংসানু মারমা(৩৫) এবং আরেক অভিযানে বাবু মারমাকে আটক করতে সক্ষম হয় সেনাবাহিনী। পরে তাদের থানায় সোর্পদ করা হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাদরাসা ছাত্র সোহেল অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয় মংসানু মারমা।
উল্লেখ যে, ২০২১ সালে তৎকালীন ইউপিডিএফের (মূল) সদস্য ও পোস্ট কমান্ডাট মংসানু মারমাকে অস্ত্রসহ আটকের পর ২৩ মাস কারাভোগের পর জামিন বের হয়ে এসে আবারও সশস্ত্র অবস্থায় উপজেলার বাটনাতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছি মংসানু মারমা। অবশেষে তার আটকের খবরে জনপদে কিছুটা স্বস্তি নেমে এসেছে।
মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মাদরাসা ছাত্র সোহেল অপহরণ পরবর্তী হত্যার ঘটনায় জড়িত এজাহারভুক্ত মূল পরিকল্পনাকারী ও আাসামী এবং এই জনপদের আতংক সশস্ত্র সন্ত্রাসী মংসানু মারমাসহ ৭জনকে যৌথবাহিনীর অভিযানে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তাকে রোববার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে।
এদিকে শনিবার ভোরে সিন্দুকছড়ি সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের সময় পাল্টা গুলিতে এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী আহত হয় এবং আহত অবস্থায় গহীন জঙ্গলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় । পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর তল্লাশিতে ০১টি দেশীয় পিস্তল (এলজি), ০৩ রাউন্ড কার্তুজ, চাঁদা আদায়ের রশিদ এবং গুরুত্বপূর্ন নথিপত্র উক্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় ।