কুমিল্লায় অটোরিকশাচালক মেহেদী হাসানকে হত্যার পর গভীর রাতে লাশ ফেলে দেওয়া হয় চলন্ত ট্রেনের নিচে। অনলাইন জুয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে তারই বন্ধুরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ওই যুবককে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে শহরতলীর দৈয়ারা এলাকায় হত্যার পর মেহেদীর লাশ ফেলে দেওয়া হয় চলন্ত ট্রেনের নিচে। আবার সেই ঘাতকরাই লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনার এক মাস অতিবাহিত হলেও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মামলা নেয়নি রেলওয়ে পুলিশ। সাধারণ ডায়েরির পরিপ্রেক্ষিতে সুরতহাল শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অপরদিকে বিধি অনুযায়ী ইউডি মামলা দায়েরের বিধান থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তাও করেনি রেলওয়ে পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হন অটোরিকশাচালক মেহেদী হাসান (২১)। তিনি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার মাদারীচর গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, দরিদ্র পরিবারের সন্তান মেহেদী কুমিল্লা শহরতলীর দৈয়ারা এলাকায় ক্যানসার আক্রান্ত মা এবং স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ভাড়ায় অটোরিকশা চালিয়ে সংসার এবং মায়ের চিকিৎসা করতেন। চলাফেরা করতেন স্থানীয় অটোরিকশা গ্যারেজ মালিক কাউছার, তুহিন মিয়া, আবাদ মিয়া এবং আলাউদ্দিনের সঙ্গে।
ঘটনার দিন একটি নতুন মোবাইল এবং নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হন মেহেদী। অনলাইন জুয়া নিয়ে পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে কাউছারের গ্যারেজে তুহিন মিয়া, আবাদ মিয়া এবং আলাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং তর্কাতর্কি হয়।
নিহতের স্ত্রী কুলসুম আক্তার বলেন, হত্যার এক সপ্তাহ আগে আলাউদ্দিন আমার স্বামীকে মারধর করেন। সেদিন পরিকল্পিতভাবে কাউছারের গ্যারেজে তাকে হত্যা করা হয়। রাত আড়াইটার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার স্বামীর লাশ রেখে ঘাতকরা পালিয়ে যায়। টাকাপয়সা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরেই তার বন্ধুরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে আমরা ধারণা করছি। আমার স্বামীর পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হত্যার পর তাকে ট্রেনের নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আবার তারাই লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এ সময় পুলিশ দেখে তারা পালিয়ে যায়। এত বড় একটা ঘটনা কিন্তু মামলা নিচ্ছে না রেলওয়ে পুলিশ।
নিহতের মা হাসেনা বেগম বলেন, কাউছারের গ্যারেজে তুহিন মিয়া, আবাদ মিয়া এবং আলাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকে ঘাতকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি রেলওয়ে পুলিশের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও কোনো বিচার পাচ্ছি না। জিডিমূলে আমার ছেলের সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তারা ইউডি মামলাও গ্রহণ করেনি।
তিনি বলেন, রেলওয়ে পুলিশের রহস্যজনক আচরণে আমরা হতবাক। পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডকে তারা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও তাদের কাছে মামলা দিতে পারিনি। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। এখন আমি আদালতের আশ্রয় নেব।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সহীদার রহমান বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যা নাকি রেল দুর্ঘটনা সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং ভিসেরা রিপোর্ট পেলেই আমরা নিশ্চিত হতে পারব। তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এ ঘটনায় আমরা মামলা গ্রহণ করতে পারব না।
কুমিল্লা আদালতের পিপি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ইউডি মামলা ছাড়া ময়নাতদন্ত এবং লাশ দাফন করা যায় না। যেহেতু পরিবারের অভিযোগ এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তাই পুলিশ মামলা নেওয়া দরকার ছিল। এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা বিতর্কিত।