রাজশাহীতে ‘চাঁদাবাজদের’ একটি কথিত তালিকা নিয়ে তোলপাড় চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তালিকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নাম থাকায় বিষয়টি নিয়ে চলছে নানারকম আলোচনা।
কারা তালিকাটি তৈরি করেছে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা না যায়নি।
তবে স্থানীয় বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছেন, তালিকাটি পুলিশের তৈরি। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) পক্ষ থেকে বিষয়টি সরাসরি নিশ্চিত করা হয়নি।
সপ্তাহখানেক ধরে তালিকাটি হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি সাংবাদিকদের কাছেও পৌঁছেছে। যদিও শুরুতে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়নি, কিন্তু মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হওয়ার পর তালিকাটি ঘিরে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই মামলায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ১৮ জনের নাম এ তালিকাতেও পাওয়া গেছে।
তালিকায় প্রতিটি ব্যক্তির নাম, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, রাজনৈতিক পরিচয়, এমনকি মোবাইল নম্বর পর্যন্ত উল্লেখ রয়েছে। কারা কোন খাত থেকে চাঁদা তোলে এবং বর্তমানে সক্রিয় কি না- তাও লিপিবদ্ধ রয়েছে।
তালিকায় রাজশাহী মহানগরীর ১২টি থানার মধ্যে ১০ থানার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানা এলাকার ২২ জন, রাজপাড়া থানার ১৬ জন, চন্দ্রিমা ও শাহমখদুম থানার ১৪ জন করে, মতিহার ৭ জন, এয়ারপোর্ট ১৪ জন, কর্ণহার ১০ জন, দামকুড়া ও কাশিয়াডাঙ্গা থানার ৮ জন করে এবং পবা থানার ৮ জনের নাম রয়েছে। তবে তালিকাটিতে কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর বা দাপ্তরিক সিল পাওয়া যায়নি।
তালিকার এক নাম্বারে রয়েছেন ‘পটু বাবু’, যিনি ৭ জুলাই গ্রেফতার হন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন ‘ককটেল মুরাদ’, যিনি ২১ জুলাই গ্রেফতার হন। তালিকায় পটু বাবুকে ‘গাঁজা ও ফেনসিডিল বিক্রেতা, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, তিনি ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়ে কাভার্ডভ্যানচালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন।
ককটেল মুরাদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তিনি মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তার অপকর্মে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।’
গত ২৩ জুলাই বোয়ালিয়া থানায় মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক আবাসন ব্যবসায়ী ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় ৩৬ জনের নাম রয়েছে, যার মধ্যে তালিকাভুক্ত ১৮ জনও রয়েছেন। এদের মধ্যে পটু বাবু ও ককটেল মুরাদ ছাড়াও রয়েছেন- এমদাদুল হক লিমন, আমিনুল ইসলাম রিগেন, এসএম সুলতান, আরিফুল শেখ বনি, মমিনুল ইসলাম মিলু, জীম, ডালিম, টিপু, লিটন, তুহিন, নাসির, মিজান, জাফর ইমান দীপ্ত, শামছুল হোসেন মিলু, সানোয়ার হোসেন ও শাওন।
চাঁদাবাজির মামলার প্রতিবাদে গত ২৬ জুলাই রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন অভিযুক্ত নেতারা। তালিকায় নাম ওঠা এবং মামলার আসামি হওয়ায় এদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেখানে এ তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে চাঁদাবাজির মামলার আসামি মহানগরীর বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা বিএনপির সভাপতি শামছুল হোসেন মিলু দাবি করেন এ তালিকা পুলিশের।
তিনি বলেন, ১২৩ জনের যে তালিকাটার কথা আসছে, সেটা আমি যেটা দেখলাম সেটাতে ওসি সাহেবের স্বাক্ষর আছে। আমার কাছে প্রমাণ আছে। বোয়ালিয়ার ওসির স্বাক্ষর আছে যে তালিকাটা করেছে। ওসি সাহেব ষড়যন্ত্র করে করেছে।
‘প্রশাসনের প্রেসক্রিপশনে’ মামলাটি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
তালিকার ৮ নম্বরে নাম আছে মামলার ২ নাম্বার আসামি রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক লিমনের। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এটা (তালিকা) কারা করেছে আমরা বলতে পারব না। যেভাবে তালিকা করা হয়েছে, মানে যারাও করেছে (চাঁদাবাজি) তাদের নামের তালিকা এসেছে, যারাও করেনি তাদেরও নাম ওখানে চলে এসেছে।
তালিকায় নামের প্রতিবাদ করেছেন জানিয়ে এই ছাত্রদল নেতা বলেন, এইটা আমি নিজেই সিটিএসবির ডিসির (মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপকমিশনার) কাছে গিয়ে বলে এসেছি যে, এ রকম কোনো ঘটনা যদি ঘটে থাকে (তালিকা যদি করা হয়) পুনরায় তদন্ত করে আপনারা এটার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতে আমাদের আপত্তি থাকার কথা না।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, যে তালিকার কথা বলা হচ্ছে, সেটি সম্পর্কে আমি জানি না। তবে এটা ঠিক, বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি হয়, যেটা শুধু পুলিশ নয়, গোয়েন্দা সংস্থারাও করে। পুলিশ এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজ বা অপরাধী যেই দলেরই হোক, অপরাধী হিসেবে তার পরিচয়ই মুখ্য। মানুষকে বারবার যেন রাস্তায় নামতে না হয়, সে জন্যই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। চিহ্নিত অপরাধীরা ছাড় পাবে না।
Leave a Reply