রাণী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, জয়দেবপুর, গাজীপুর—এক শতাব্দী প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তার আদর্শ, সাফল্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য গাজীপুরের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত।
১৯০৫ সালে ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্রনারায়ণ তার সহধর্মিণী রাণী বিলাসমনি দেবীর স্মরণে “এম.ভি স্কুল” নামে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালের এপ্রিল মাসে সরকারি অনুমোদন লাভের পর এটি “রাণী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়” নাম ধারণ করে এবং তখন থেকেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছে। বিদ্যালয়টি ভাওয়াল রাজবাড়ীর একেবারে কাছ ঘেঁষে অবস্থিত, যা এর ঐতিহাসিক ও স্থাপত্য মূল্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যালয়ের মূল আদর্শ হল “Come to learn & Go out to serve” অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলা এবং সমাজের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা। এই আদর্শকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেমের গুণাবলী গড়ে তোলা হয়। প্রতিদিন দুই শিফটে (প্রভাতি ও দিবা) ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়, এবং মোট ১৭টি শ্রেণিকক্ষ, তিনটি বিজ্ঞানাগার, একটি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ এবং প্রায় চার একরের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা লাভ করে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৭০০ থেকে ১৮০০ এর মধ্যে রয়েছে, যা বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রমাণ।
সাফল্যের দিক থেকে বিদ্যালয়টি ধারাবাহিকভাবে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হারের শীর্ষে রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মোঃ নূরুল ইসলাম (ভাওয়াল রত্ন) সহ বেশ কয়েকজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক এখানে কর্মরত আছেন। এছাড়াও বিদ্যালয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন মার্শাল মিডল স্কুলের সাথে তথ্য বিনিময় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে, যা শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করেছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয়। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্কাউট ডেনের কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ ও নেতৃত্ব ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। স্থানীয় দাতাদের মধ্যে জমিদার পরিবার, সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তিগত দাতারা বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে নিয়মিত সহায়তা প্রদান করে আসছেন। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে বিদ্যালয়টি গাজীপুরের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।