‘চাঁদা না পেয়ে’ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার একটি রিসোর্টে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ৮ তরুণ-তরুণীকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পাঁচ দিন পরে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাটের
ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও জোর করে বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মানবাধিকারকর্মী ও নারীনেত্রীরা বলছেন, বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে বিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনারও বিচার হওয়া দরকার।
এটাও এক ধরনের মব। সম্মান বাঁচাতে, যেকোনও হয়রানি ঠেকাতে অভিভাবকরা মুখ না খুললেও রাষ্ট্রের দায়িত্ব এদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার একটি রিসোর্টে চাঁদা না পেয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ’ তুলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এলাকার লোকজন। এ সময় রিসোর্টে অবস্থান করা ১৬ তরুণ-
তরুণীকে আটক করেন তারা। পরে ওই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ৮ জনকে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে কাজি ডেকে বিয়ে দেন। অন্যদের অভিভাবকের জিম্মায় সামাজিকভাবে বিয়ের আয়োজন করার মুচলেকা নিয়ে
ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পাঁচ দিন পরে ২৩ জানুয়ারি সিলেট মহানগর পুলিশের মোগলাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রদল নেতাসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২৫০
থেকে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
‘উই ক্যান’-এর সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, যাদেরকে আটক করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারতো। মব তৈরি করে, এভাবে
বিয়ে দেওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ভুলে গেলে চলবে না, কারো অমতে, জোর করে ধরে-বেধে বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাও আরেকভাবে অপরাধের আওতাতেই পড়বে। এই ছেলেমেয়েগুলো আদৌ বিবাহ
সম্পর্কে যেতে চায় কিনা সেই সিদ্ধান্ত তাদের হওয়ার কথা, বাইরের কেউ এটা চাপিয়ে দিতে পারে কিনা সে প্রশ্ন তো উঠবেই। বলা হচ্ছে অভিভাবকদের উপস্থিতি ও অনুমতিক্রমে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে পরিস্থিতি
তৈরি হয়েছে তারপর কোনও অভিভাবকের আর কী করণীয় ছিল। তাকে অসম্মানের মধ্য দিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ‘মব’কারীদের শর্তে রাজি হতেই হতো। এটার উপযুক্ত বিচার হওয়া জরুরি, নাহলে খারাপ দৃষ্টান্ত থেকে যাবে।
এ ধরনের মোরাল পুলিশিং বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, কেউ যদি অপরাধ করেছে মনে হয়, তাহলে তাকে পুলিশে দিন। এভাবে তাদের ধরে বিয়ে দিয়ে
দেবেন– এই পুলিশিং বন্ধ করতে হবে। যারা এটা করেছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা দরকার।
বিয়ের বিষয়টি মামলায় উল্লেখ আছে কিনা জানতে চাইলে সিলেট পুলিশ সুপার এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, এজাহারে বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ আছে। জোর করে মামলা করানো হয়েছে
বলে বাদী দাবি করছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরুর দিন থেকে বাদী বলছেন তার কী কী ক্ষতি হয়েছে এবং তিনি মামলা করবেন। তিনি এসে নিজে যেভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন সেভাবেই মামলা হয়েছে।
Leave a Reply