
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্লাকে ক্লোজ করা হয়েছে। থানার একাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্য, প্রবাসীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকা আদায় এবং অসদাচরণের অভিযোগ ওঠার পর এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গণমাধ্যমের হাতে পৌঁছানো একটি ভিডিওতে দেখা গেছে—ওসি আসলাম উদ্দিন মোল্লা এক সেবা প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করছেন। এরপর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা।
নড়িয়া উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজারের বেশি প্রবাসী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রবাসী গণমাধ্যমকে জানান, ইউরোপ থেকে দেশে ফেরার পর থানায় ডেকে নিয়ে ওসি আসলাম তাদের কাছ থেকে এককালীন বড় অঙ্কের টাকা নিতেন। পাশাপাশি মাসিকভাবে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা থানায় দিতে হবে বলেও জানাতেন। অন্য কেউ বিষয়টি জানলে “ডেভিল হান্ট” নামে কথিত অভিযানে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হতো বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওসি আসলাম উদ্দিন মোল্লা তার নিজ জেলা রাজবাড়ী থেকে পরিচিত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে এনে থানায় পদায়ন করেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঘুষ–বাণিজ্যের রাজত্ব গড়ে তোলেন তিনি।
গত ৯ অক্টোবর রাতে নড়িয়ার চামটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম রাড়ীকে কোনো মামলা ছাড়াই গ্রেপ্তার করে ওসি তদন্ত সুকান্ত দত্তের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। স্থানীয় সূত্রের দাবি, গ্রেপ্তারের আগে চেয়ারম্যানের পরিবারের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা গ্রহণ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে প্রচার করা হয়, পুলিশের ওপর ‘জনপ্রতিরোধের মুখে’ নিজাম রাড়ীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনার পর পুলিশ কোনো মামলা না করে শুধু একটি জিডি করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়।
নড়িয়া থানার এসআই খাইরুল লস্কর, রাজিব রহমান, এরশাদ, এএসআই আল মামুন ও প্রবীর মণ্ডলের বিরুদ্ধে নিয়মিত ডিউটি না করে ‘আসামি ধরার নামে টাকা আদায়ের’ অভিযোগ উঠেছে।
এক ঘটনায় ভোজেশ্বর এলাকা থেকে প্রবাস থেকে ফেরত আবু বকর বেপারীকে ইয়াবাসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ ওঠে। ভিকটিমের দাবি, তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে পরদিন ৩৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করা হয়।
ভোজেশ্বর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ, তার দায়িত্বকালে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও ঘুষের অভিযোগ ব্যাপক ছিল। পাচক এলাকায় আবু সিদ্দিক ঢালী হত্যাকাণ্ডের রাতে আসামিপক্ষের বাড়ি–ঘর লুটপাট এবং পিকআপ ভর্তি গরু ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায়ও তার নাম উঠে আসে। স্থানীয়দের ধারণা, ওই রাতে ওসি আসলাম ১০ লাখ টাকার বেশি ঘুষ নিয়েছিলেন।
গত ১৯ জুন মাজেদা হাসপাতাল এলাকা থেকে চারজন স্কুলশিক্ষার্থীকে আটক করে এসআই খাইরুল লস্কর ও এএসআই প্রবীর মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন সিভিল টিম। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও মামলা ‘হালকা ধারা’তে পাঠানোর শর্তে তাদের পরিবারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করা হয়। পরে বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে দেড় লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
কোরবানির ঈদে বিভিন্ন হাট থেকে থানার জন্য ছয়টি খাসি আনা হলেও তা পুলিশ ফোর্সের ভাগ্যে জোটেনি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর মধ্যে চারটি খাসি ওসি আসলামের বাসায় পাঠানো হয়। পরে থানায় রাখা একটি খাসি ‘চুরি’ হয়ে গেলে পুলিশ দুইজনকে আটক করে। তবে পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ‘রক্তমাখা চামড়া’ও গায়েব হয়ে যায়।
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগগুলোর বিষয় বিস্তারিত খতিয়ে দেখব। তদন্ত অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।