
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ঘটনায় সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এবং ট্রাইব্যুনালের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক সরকারের শাসনামলে সংঘটিত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে ডিজিএফআইয়ের পাঁচজন সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আবেদনে অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য ট্রাইব্যুনালকে অনুরোধ করা হয়।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে একটি জরুরি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে প্রায় ৫৬ জন জেনারেল এই বৈঠকে অংশ নেন বলে জানা যাচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা ট্রাইব্যুনালের এই পদক্ষেপকে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ‘অসম্মানজনক’ ও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য কয়েকজন সাবেক সেনাপ্রধানকেও সদর দপ্তরে ডাকা হতে পারে।
এই ঘটনাটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের এমন প্রতিক্রিয়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য তার এক ফেসবুক পোস্টে এই পরিস্থিতিকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, “সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব বিপজ্জনক আচরণ করছেন।” তিনি আসন্ন সংকট নিরসনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসকে জরুরিভিত্তিতে দেশবাসীকে অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে বা আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। দেশের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব এবং বিচার বিভাগের মধ্যে সৃষ্ট এই টানাপোড়েন কোন দিকে মোড় নেয়, তা নিয়ে পর্যবেক্ষক মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সকলেই এখন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে।