জোর করে ৩৮ বছর বয়সি সৌদি প্রবাসী আব্দুল হালিম হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাদ্রাসাপড়ুয়া ১৩ বছর বয়সি জান্নাতুলের। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়িতে চলে আসে এ কিশোরী বধূ। পরে চলে যায় ঢাকায় থাকা মায়ের কাছে। কৌশলে সেখান থেকে তাকে এনে জোর করে স্বামীর বাড়ি পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জান্নাতুল রাজি না হওয়ায় বাবা, চাচা ও দাদা মিলে জান্নাতুল, তার মা, আরেক মেয়ে, মামা, মামী ও মামাতো ভাইকে পিটিয়ে জখম করে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকালে বরগুনার আমতলী উপজেলার নাচনাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
ভুক্তভোগী কিশোরী বধূ জান্নাতুল উপজেলার নাচনাপাড়া গ্রামের আবু জাফর হাওলাদারের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল জোর করে জান্নাতুলকে উপজেলার কড়াইবুনিয়া গ্রামের হারুন-অর রশিদ হাওলাদারের ছেলে হালিমের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। গত ১৩ জুন হালিম স্ত্রীকে তার বাড়িতে তুলে নেয়। এরপর থেকেই কিশোরী বধূকে যৌন নির্যাতন চালিয়ে আসছে হালিম। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে গত ২২ জুলাই বাবার বাড়িতে চলে আসে জান্নাতুল। বাবাকে জানিয়ে দেয়, আর স্বামীর বাড়িতে যাবে না। এতে বেঁকে বসেন বাবা আবু জাফর হাওলাদার, চাচা ফোরকান হাওলাদার ও দাদা নুরুল ইসলাম হাওলাদার। গত ২৫ জুলাই বাবার বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় মা আইরিন বেগমের কাছে চলে যায় জান্নাতুল।
সালিশের কথা বলে মেয়েকে কৌশলে বাড়িতে আনেন বাবা। শুক্রবার মেয়েকে স্বামীর বাড়িতে যেতে বলে আবু জাফর হাওলাদার। কিন্তু যেতে রাজি হয়নি এ কিশোরী। এতে ক্ষুব্দ হয়ে বাবা, চাচা ও দাদাসহ ৮ থেকে ১০ জন জান্নাতুলকে মারধর শুরু করে। তাকে রক্ষায় মা আইরিন বেগম, বোন লামিয়া, মামী শিরিনা আক্তার, মামা মিজানুর রহমান ও মামাতো ভাইয়ের ছেলে বায়েজিত এগিয়ে আসলে তাদের পিটিয়ে জখম করে ও ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।
ভুক্তভোগী জান্নাতুল বলেন, ‘বাবা, দাদা ও চাচা মিলে আমাকে জোর করে একজন বয়স্ক ব্যক্তির কাছে বিয়ে দিয়েছেন। স্বামীর যৌন নির্যাতন সইতে না পেরে আমি তার বাড়িতে যেতে রাজি হয়নি। এতে আমার বাবা, চাচা , দাদা ও প্রতিবেশী ৮ থেকে ১০ জন লোক মিলে আমাকে, আমার মা, বোন, মামা, মামিসহ ছয়জনকে পিটিয়ে জখম করেছে। ’
জান্নাতুলের মা আইরিন বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স ১৩ বছর। ঢাকার একটি মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। এ বয়সের মেয়েকে ৩৮ বছর বয়সের একটি ছেলের সঙ্গে আমার স্বামী, শ্বশুর ও তার স্বজনরা মিলে বিয়ে দিয়েছেন। জামাতার শারীরিক নির্যাতন সইতে না পেরে মেয়ে ওই জামাতার সঙ্গে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মেয়েকে তার বাবা শুক্রবার জামাতার বাড়ি জোর করে পাঠাতে চায়। মেয়ে যেতে রাজি না হওয়ায় মেয়েসহ আমাদের মারধর করে আটকে রাখে।
অভিযোগের বিষয়ে আবু জাফর হাওলাদার বলেন, মেয়ে জামাতার বাড়ি যেতে না চাওয়ায় আমি গালাগাল করেছি। তাকে মারধর করা হয়নি। মেয়ে যেতে না চাইলে আমি ওই জামাতার কাছে পাঠাবো না।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. লুনা বিনতে হক বলেন, ‘আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply