দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে হলিউডে বেশ দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন অ্যান হ্যাথওয়ে। ভার্সেটাইল অভিনেত্রী হিসাবেও ইন্ডাস্ট্রিতে তার বেশ সুনাম রয়েছে। ‘দ্য উইচ’, ‘ডেভিল ওয়েয়ার্স প্রাডা’, ‘প্রিন্সেস ডায়েরিজ’সহ আরও অনেক হিট সিনেমা রয়েছে তার। ব্যক্তিগত জীবনও তার বেশ বর্ণিল। অভিনেত্রী শুধু প্রশংসাই নয়, বরং প্রচুর সম্পদও অর্জন করেছেন।
হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রীদেরও একজন তিনি। ক্রিস্টোফার নোলানের ৭৫৮ মিলিয়ন ডলারের সিনেমা, ‘ইন্টারস্টেলার’-এ অভিনয়ের জন্য আকাশচুম্বী পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জানেন কী, এটাই তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত সিনেমা নয়। অ্যান হ্যাথওয়ে রবার্ট জেমেকিসের ‘দ্য উইচেস’-এ গ্র্যান্ড হাই উইচের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি ছিল ১৯৯০ সালের অ্যাঞ্জেলিকা হিউস্টন অভিনীত ক্ল্যাসিকের একটি আধুনিক রিমেক। মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, হ্যাথওয়েকে এ প্রজেক্টের জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলারের বিশাল পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।
অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা হ্যাথওয়ের স্কুল থেকেই শুরু হয়েছিল। ওই সময় তিনি মঞ্চনাটক এবং স্থানীয় থিয়েটার প্রযোজনায় অংশগ্রহণ করতেন। পর্দায় তাকে প্রথম দেখা যায় ফক্স সিরিজ ‘গেট রিয়েল’-এ। এটি ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রচার হয়েছিল। তবে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন ডিজনির হিট ‘দ্য প্রিন্সেস ডায়েরিজ’র মাধ্যমে।
এরপর শুধু তার সাফল্যের গল্প। কিশোরী আইকন থেকে হয়ে ওঠেন হলিউডের দাপুটে অভিনেত্রী। ২০১৩ সালে ‘লেস মিজারেবলস’র জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে প্রথমবার একাডেমি পুরস্কার (অস্কার) অর্জন করেন। তবে অস্কার জয়ের পর ক্যারিয়ারের মাঝপথে হোঁচটও খেয়েছেন তিনি। তার অস্কার নিয়ে অনলাইন দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ভ্যানিটি ফেয়ারকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘লেস মিজারেবলস’র জন্য অস্কার জেতার আগে এবং পরে জনমত যখন তার বিরুদ্ধে চলে যায়। এ সময় অনলাইনে হ্যাথওয়েকে ব্যাপকভাবে উপহাস করা হয়েছিল। একবার তিনি গুগল করে অনুসন্ধান করার সময় শীর্ষে থাকা একটি প্রতিবেদন দেখতে পান, যার শিরোনাম ছিল ‘সবাই কেন অ্যান হ্যাথওয়েকে ঘৃণা করে?’
অ্যান বলেন, ‘এরপর থেকে অনেক নির্মাতা আমাকে নিয়ে কাজ করতে ভয় পেতেন। কারণ তারা এতটাই চিন্তিত ছিলেন যে, আমার পরিচয় অনলাইনে কতটা বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।’ অ্যানকে এ বিষাক্ত যাত্রা থেকে টেনে তুলেছেন ‘ওপেনহাইমার’ নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান। তিনি তখন তাকে নিয়ে বানিয়েছিলেন ‘ইন্টারস্টেলার’।
এ প্রসঙ্গে অ্যান বলেন, ‘নোলানের মধ্যে একজন দেবদূতের বসবাস ছিল। তিনি অনলাইনে আমাকে নিয়ে কী হচ্ছে এটা নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। আমি যে একাধিক হিট ও সেরা সিনেমার অংশ ছিলাম, এটাই তিনি ভেবেছেন। এ কারণে তার এবং আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সিনেমায় আমাকে সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রে অভিনয় করা সুযোগ দিয়েছিলেন।’
অ্যান হ্যাথওয়ে নোলানের ২০১৪ সালের মহাকাশ মহাকাব্য ‘ইন্টারস্টেলার’-এ নাসার বিজ্ঞানী ডক্টর অ্যামেলিয়া ব্র্যান্ডের ভূমিকা অভিনয় করেছেন। এর আগে তিনি ২০১২ সালের ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’-এ সেলিনা কাইল চরিত্রে নোলানের সঙ্গে কাজ করেছেন। এটিও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল সে সময়। নোলানের সহযোগিতার পর আবারও ঘুরে দাঁড়ান অ্যান।
এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নিজের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে হলিউডের শীর্ষ অভিনেত্রীদের একজনে পরিণত হয়েছেন। তবে সে সময়ের কথা মনে পড়ে তার। বলেছেন, ‘অপমান সমালোচনার চেয়েও ভয়ংকর। এটাকে বন্ধ করা যাবে না। মূল কথা হলো, তোমাকে সাহসী থাকতে হবে। আর ভাবতে হবে, ‘যদি আমি নিরাপদ থাকি, যদি আমি লোকেদের সঙ্গে সোহার্দপূর্ণ আচরণ করি, সম্পর্ক রাখি, যদি আমি নিজের দিকে খুব বেশি মনোযোগ আকৃষ্ট না করি, তাহলে অপমান কিংবা সমালোচনায় কোনো ক্ষতি হবে না।’
প্রথম সিনেমায় এক মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক পাওয়া এ অভিনেত্রী পরবর্তী সময়ে সিনেমাপ্রতি ৫ থেকে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছেন। সেলেব্রিটি নেট ওয়ার্থ অনুসারে, তার আনুমানিক মোট সম্পদ এখন প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার। এদিকে কাজের সূত্রে অ্যান হ্যাথওয়ে বর্তমানে মেরিল স্ট্রিপের সঙ্গে ডেভিল ওয়েয়ার্স প্রাডা-২’র শুটিং নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।
Leave a Reply