বরিশালের বাকেরগঞ্জে একটি কুকুরকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও ফাঁসি কার্যকর করে ফেসবুকে প্রচারের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এর একটি ভিডিও ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় একজনকে জরিমানা ও তিনজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত মুচলেকা দিলেও এখতিয়ারের বাইরে থাকায় সবাইকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ওদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
ছড়িয়ে পরা ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি কুকুরকে গলায় রশি বেঁধে গাছের ডালের সঙ্গে টেনে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। কয়েকজন সেই চিত্রের ভিডিও ধারণ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড দুর্গাপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দা খোকন হাওলাদার (৪২) কয়েকদিন ধরে গ্রামের ওই কুকুরটিকে খুঁজছিলেন। তিনি প্রচার করে বেড়াচ্ছিলেন কুকুরটি পাগল তাই কুকুরটির ফাঁসি দেওয়া হবে। রোববার কুকুরটিকে এলাকায় পেয়ে খোকন হাওলাদারের নেতৃত্বে রায়হান মল্লিক (১৭), বায়েজিদ হাওলাদার (১৭) ও সুমন গাজী (২১) মিলে ধরে আনা হয়। কুকুরটির গলায় লম্বা রশি বেঁধে সেই রশি গাছের ডালের ওপর থেকে একপ্রান্ত খোকন হাওলাদার ধরে রাখেন। তিনি রশি ধরে টান দিলে কুকুরটি ঝুলে উপরে উঠে যায়। তখন একজনে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কুকুরটিকে হত্যা করেন। অন্য দুজনে ভিডিও ধারণ করেন। তারা নিজেরাই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। এরপর মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হলে স্থানীয় পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করে কলসকাঠি ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, কুকুর মারার ঘটনা আজকে সমাধান হয়েছে। এসিল্যান্ড স্যার, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসেছিলেন। তারা খোকন হাওলাদারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। অন্য তিনজনকে মুচলেকায় ছেড়েছেন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তন্ময় হালদার বলেন, কুকুর হত্যার ঘটনায় চারজনের মধ্যে একজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওখানকার অভিযুক্ত অন্যদের বিষয়ে আইন প্রয়োগের এখতিয়ার ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেই। তারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এজন্য তাদের মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মো. সালেহ আল রেজা জানিয়েছেন তিনি প্রশিক্ষণে ঢাকায় থাকায় বাকেরগঞ্জের বিষয়ে কিছু জানেন না। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আমিরুল ইসলাম সোহাগ।
ডা. মো. আমিরুল ইসলাম সোহাগ বলেন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে আমি ছিলাম। স্থানীয় বাসিন্দারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, কুকুরটি ভারসাম্যহীন ছিল। তবে ভারসাম্যহীন থাকলেও এভাবে নৃশংসভাবে কোনো প্রাণীকে হত্যা করা আইনত অপরাধ। ভ্রাম্যমাণ আদালতে একজনের জরিমানা হয়েছে। বাকিদের মুচলেকা রাখা হয়েছে। এই বিষয়ে প্রাণিম্পদ অধিদপ্তর থেকে কি ব্যবস্থা নিতে পারি তা প্রাণিম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে নেওয়া হবে।
Leave a Reply