ভরদুপুরে রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড়ে জিলাপির প্যাচের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বাসগুলোকে। কচ্ছপ গতিতে বাস চালানো কিংবা অন্য গাড়ির পথ রোধ করে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বাসগুলোকে। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে পুলিশ ও লাইনম্যান থাকলেও গাড়ি চলছে না।
চালক ও হেলপারদের দাবি, অন্যের পথ রোধ করে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে চান না তারা। কিন্তু অতিরিক্ত গাড়ি, দিনচুক্তির ভাড়া ও গেট পাস (জিপি) নামক চাঁদার অর্থ তুলতে রাস্তায় এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
একজন চালক জানান, আমরা অন্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই না। তাছাড়া সড়কে অনেক গাড়ি বেড়ে গেছে। আসা-যাওয়া দুই ট্রিপে ১২ হাজার ৩০০ টাকা খরচ হয়। এরপর ড্রাইভার ও স্টাফদের বেতন রয়েছে।
এদিকে, ঢাকায় মোট নিবন্ধিত রুট সংখ্যা ১২৮টি। এর একটিতে চলে ভিক্টর পরিবহণ। তাদের ১২৯টি গাড়ির নিবন্ধন থাকলেও সড়কে গাড়ি চলে প্রায় আড়াইশোটি।
অন্যদিকে, প্রতিদিন ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড় কিংবা পল্টনে ৫৫০ টাকা জিপি নামক চাঁদা জমা দিতে হয়। এই অর্থ না দিয়ে গাড়ি চালাতে পারেন না চালকরা। অনেক বছর ধরেই চলে আসছে এই রীতি। এখন কেবল সাইনবোর্ড বদলেছে। দুপুরের পর থেকেই বাস থেকে তোলা চাঁদার হিসাব শুরু হয়। পরে তা মালিক সমিতির কাছে চলে যায়।
সাধারণ অঙ্কে প্রতিদিন এক রুটেই এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়। যা বছরে দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ কোটি। রাজধানীতে চলা মোট ৭ হাজার গাড়ির হিসেব করলে মোট অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় দেড়শো কোটি টাকা।
আরেকজন চালক বলেন, সার্জেন্টরা টাকা নেওয়ার কারণে সুবিধা পাওয়া যায়। অন্যথায় বড় অঙ্কের মামলা দেওয়া হয়।এ টাকার গন্তব্য অনেক দূর পর্যন্ত বলেও জানান কেউ কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহণ সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, সার্জেন্টদের ৫০০ টাকা, ট্রাফিক ইন্সট্রাক্টরদের এক হাজার ও এডিসিদের তিন হাজার ও ডিসিদের ৪০০০ টাকা করে দিতে হয়।
অপরদিকে, চাঁদার টাকা তোলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সৌহার্দতাও দেখা যায়। ভিক্টর পরিবহণের মালিক সমিতিতেও ভিন্ন দুই রাজনৈতিক দলের কর্তৃত্ব রয়েছে।
মালিক সমিতির অধীনে আদায় হওয়া এই বিপুল অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণেই ব্যয় হয় বলে দাবি সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির। তারা জিপি তোলার অজুহাত হিসেবে সড়কের লাইনম্যান খরচকে দেখিয়ে থাকেন।
ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাবুল বলেন, এই টাকা কোম্পানির খরচে ব্যবহার করা হয়। কর্মকর্তাদের কিছু সম্মানী দেওয়া হয়। তাছাড়া, পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা স্টাফ খরচ রয়েছে।তবে পরিবহণ সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, এই টাকা মালিক সমিতি ভাগ ভাটোয়ারা করে খায়। এমনকি কমিটির কিছু সদস্যের নিজের গাড়িও নেই।
নগর পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরানোর সব উদ্যোগ প্রভাবশালীদের অনাগ্রহে ভেস্তে যায়।
নগর পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. মো. সালাহউদ্দিন বলেন, গেট পাসের (জিপি) নামে টাকা নেওয়ার প্রভাব যাত্রীদের ওপর পড়ছে। বিষয়টি সমাধানে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরকারের বসা উচিত। আইন ও প্রয়োগকারী বাহিনী থাকার পরও মালিক সমিতির জিম্মি থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ঢাকার গণপরিবহণের চেহারা পাল্টানোর উদ্যোগ বহু বছরের। কিন্তু মাঝখানে সুবিধাভোগী সিন্ডিকেটের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এমনকি সড়ক নিরাপত্তায় থাকা আইনও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। যাত্রী শ্রমিকরা এর পরিবর্তন চাইছেন। এর জন্য সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি সবার।
Leave a Reply