শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের উমর উদ্দিন মাদবর কান্দি গ্রামে আজান ও খুতবা দেওয়া নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন হয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা খবির উদ্দিন সরদার (৫৮)। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় শোক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত খবির উদ্দিন সরদার পিতা মৃত ইউনূস সরদার, নিয়মিতভাবে মসজিদে নামাজ পড়তেন এবং খুতবা ও আজানে অংশ নিতেন। গত ১৮ আগস্ট ভোর বেলায় ফজরের নামাজে মসজিদের ইমাম মুসল্লিদেরকে নামাজের আহ্বান করলে এতে বিরক্ত হন একই গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী আলমাছ সরদার (৩০) পিতা মৃত সহন সরদারের ছেলে দীর্ঘদিন ধরে ।মসজিদের আজান ও খুতবায় বিরক্তবোধ করতেন।এ নিয়ে আলাউদ্দিন সরদার জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আলমাছ সরদার।
সোমবার সন্ধ্যায় মসজিদকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আলমাছ সরদার তার সহযোগীদের নিয়ে খবির উদ্দিন সরদারের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আলমাছ সরদার ধারালো ছুরি দিয়ে খবির উদ্দিন সরদারের বুকের ডান পাশে আঘাত করে এবং তাকে পানিতে ফেলে দেয়। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে জাজিরা হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়।
খবির উদ্দিন সরদারের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মসজিদের ধর্মীয় কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
নিহত খবির উদ্দিন সরদার স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার মৃত্যুতে উপজেলা বিএনপি গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে আলমাছ সরদারের বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা আলমাছ সরদারের পরিবারের উপর ও বাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাটের ঘটনা ঘটে।ঘটনা স্থল থেকে পুলিশ আলমাছ সরদারের মা ভাই বোনদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জাজিরা থানা
নিয়ে আসেন এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযুক্ত আলমাছ সরদার ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।” নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
একটি ধর্মীয় আচার আজান ও খুতবাকে কেন্দ্র করে এমন হত্যাকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। এলাকার মানুষ মনে করছেন, এই ঘটনা শুধু একটি খুন নয়, বরং সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতির জন্যও হুমকি। তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন
Leave a Reply