1. talukdermdsohel27@gmail.com : Md Sohel : Md Sohel
  2. tv@tarangotv.com : তরঙ্গ টিভি : তরঙ্গ টিভি
  3. info@www.tarangotv.com : তরঙ্গ টিভি :
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

কব্জি কেটে টিকটকে ভিডিও করে উল্লাস করতো ‘কব্জি কাটা গ্রুপ’

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদপুরের আলোচিত সন্ত্রাসী ‘কব্জি কাটা গ্রুপে’র প্রধান মো. আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার ওরফে কব্জি কাটা আনোয়ারকে (৩৬) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বাহিনীটি বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির রাজত্ব গড়ে তোলে কব্জি কাটা গ্রুপ। এই রাজত্ব কায়েম করতে গিয়ে আনোয়ার ৭ জনের কব্জি কাটাসহ বহু মানুষকে কুপিয়ে আহত ও পঙ্গু করেন। শুধু তাই নয়, কব্জি কেটে টিকটকে ভিডিও করে উল্লাস করতেন আনোয়ার ও তার গ্রুপের সদস্যরা।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার।

তিনি বলেন, র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর আনোয়ার স্বীকার করেছে তিনজনের কব্জি কেটেছে। কিন্তু র‍্যাবের তদন্তে আনোয়ার ৭ জনের কব্জি কেটেছে। টার্গেট ব্যক্তির ওপর হামলা ও ছিনতাইয়ের সময়ে আনোয়ারের স্টাইল হলো- যে ব্যক্তির ওপর হামলা করা হবে তার আশপাশের রাস্তায় কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করা। এরপর তারা যানজট কমাতে সহযোগিতা করার নামে কৃত্রিম ব্লোক সৃষ্টি করা। পরে আনোয়ার এসে টার্গেট ব্যক্তির ওপর হামলা করেন। পাশাপাশি সে আসার আগে সামনে ও পেছনে একাধিক টিম থাকে।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক বলেন, গত ৫ আগস্ট পর যৌথ বাহিনীর অভিযানে পাঁচ শতাধিক ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার করেছি। মোহাম্মদপুরে অপরাধের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।

মোহাম্মদপুরে আগে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধ হতো। কিন্তু পরিবর্তিত সময়ে এসে কারা অপরাধীদের মদদ দিচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন সামাজিক অস্থিরতা শুরু হয়, আপনারা জানেন ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এই পরিবর্তনের জের ধরে সন্ত্রাসীরা তৎপর হয়ে ওঠে। ৫ আগস্টের পর মোহাম্মদপুরে যে পরিমাণ অপরাধ বেড়েছিল যৌথভাবে অভিযান করে জেনেভা ক্যাম্পসহ মোহাম্মদপুরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। মোহাম্মদপুর ও আদাবর কেন্দ্রিক কোনো সন্ত্রাসী ও গডফাদারের স্থান হবে না।

র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার

আনোয়ারের মদদদাতাদের বিষয় জানতে চাইলে খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, আনোয়ারের পেছনে দীর্ঘদিন লেগেছিলাম। আমাদের কাছে তথ্য আসে মোহাম্মদপুরের এক্সেল বাবু নামে এক ব্যক্তি তাকে মদদ দিচ্ছে। সে আড়ালে থেকে আনোয়ারকে ছত্রছায়া দেয়।

কে এই কব্জি কাটা আনোয়ার

র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, গ্রেপ্তার আনোয়ার ওরফে কবজি কাটা আনোয়ার ২০০৫ সালে জীবিকার সন্ধানে বাগেরহাট জেলা থেকে ঢাকায় তার বাবার কাছে চলে আসে। ঢাকায় এসে বিশুদ্ধ খাবার পানি পরিবহন করতো। প্রথম পর্যায়ে আনোয়ার অপরাধ জগতে ছিনতাই ও বাস স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি শুরু করলেও ২০২৪ সালে মানুষের কব্জি কেটে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে কব্জি কাটা গ্রুপের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কব্জি কাটা ভিডিওটি টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

আত্মগোপনে থেকে গড়েন দুর্ধর্ষ বাহিনী

কব্জি কাটা ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে পড়লে আনোয়ার ও তার সহযোগীদের কুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এলে ধারাবাহিক অভিযানের মুখে বাহিনীর অন্যতম সদস্য ভাগনে বিল্লালসহ আরও অনেকে গ্রেফতার হলে আনোয়ার নিজের পূর্বের লেবাস পরিবর্তন করে আত্মগোপনে থেকে কবজি কাটা গ্রুপের নামে দুর্ধর্ষ এক বাহিনী গড়ে তোলে।

যেসব এলাকায় কব্জি কাটা গ্রুপের আধিপত্য

মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং ও আদাবরের শ্যামলী হাউজিং, শেখেরটেক, নবোদয় হাউজিং এলাকায় হত্যা, অস্ত্র-গুলি, মাদক কেনাবেচা, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে কব্জি কাটা আনোয়ার গ্রুপ বাহিনী।

ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত তারা

র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক আরও বলেন, কব্জি কাটা আনোয়ার গ্রুপ নিজের শক্তি বৃদ্ধি এবং আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এলাকার কিশোরদের মাদক, অস্ত্র ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে তাদের ব্যবহার করে অপরাধ জগৎ থেকে উপার্জিত টাকার মাধ্যমে সে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে উঠে।

অত্যন্ত সুকৌশলে বারবার সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল এবং এলাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি। কব্জি কাটা আনোয়ার বাহিনী প্রথমে যাকে টার্গেট করে তাকে যেকোনোভাবে হামলা করে।

সড়কের সিসি ক্যামের ভেঙে পুলিশের চোখ ফাঁকি 

গ্রুপ সদস্যরা রাস্তায় কৃত্রিম যানজট তৈরি করতেন, সড়কে সিসি ক্যামেরা থাকলে সেগুলো ভাঙচুর করতেন তারা। রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের আদলে যানজট নিয়ন্ত্রণের নাটক সাজিয়ে রাস্তা ব্লক করতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সাধারণ জনগণ বাধা দিচ্ছে কি-না তা খেয়াল রাখতেন। এরপর তারা ফিল্মি স্টাইলে ভুক্তভোগীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।

পরে হাতের কব্জি কেটে সবার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায়। গত কয়েক মাসে গ্রেপ্তার আনোয়ারের হাতেই ৭/৮ জন হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন পা, কেউ হাত আবার কেউ পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তার হামলার শিকার ব্যক্তিদের বেশিরভাগই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তার ভয়ে মামলাও করেননি অনেকে। আবার কেউ মামলা করলে তাকে নানা ভয়ভীতি দেখাতো আনোয়ারের কব্জি কাটা গ্রুপের সদস্যরা।

প্রঙ্গত, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে অভিযান চালিয়ে কব্জি কাটা আনোয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-২। আনোয়ার ছাড়াও গ্রেপ্তার হয়েছেন তার দুই সহযোগী মো. ইমন (২০) ও মো. ফরিদ (২৭)। তাদের আদাবর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র সামুরাই একটি, ছুরি দুটি, গাঁজা ৮ কেজি, একটি প্রাইভেটকার ও একটি হাত ঘড়ি উদ্ধার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© তরঙ্গ টিভি
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট